প্রচ্ছদ অর্থনী‌তির বার্তা নবগঠিত ই-কমার্স সেল পুনর্গঠন

নবগঠিত ই-কমার্স সেল পুনর্গঠন

0

ই-কমার্স খাতে জালিয়াতি রোধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নবগঠিত ই-কমার্স সেল পুনর্গঠন করা হয়েছে। শুরু থেকে মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের অধীনে থাকা এই সেলকে এবার আইআইটি বা আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

পুনর্গঠিত ই-কমার্স সেলে সদস্য হিসেবে আছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সাঈদ আলী, বাণিজ্য পরামর্শক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান। আইআইটির অধিশাখার যুগ্ম সচিবকে ই-কমার্স সেলের সদস্য সচিব করা হয়েছে।

সরকার ই-কমার্স নীতিমালা ২০১৮ প্রণয়ন করার পর এর আলোকে ই-কমার্স সেল গঠন করা হয়। তবে ২০১৯ সালের শুরু থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই সেলে নিবেদিত (ডেডিকেটেড) কোন কর্মকর্তা ছিলেন না। ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক এই সেলটির দেখভাল করতেন।

সম্প্রতি ই-কমার্সে জালিয়াতি ঠেকাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব ব্যর্থতার কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে ই-কমার্স সেলকে সময়মতো শক্তিশালী না করার বিষয়টিও রয়েছে।

এছাড়াও সম্প্রতি ই-কমার্সে তদারকি ও প্রতারিত ভোক্তার সুরক্ষায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১৫ সদস্যের এ কমিটি গঠন করে দিয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, পুলিশ হেড কোয়াটার্স, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট, এনবিআর, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার, অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর প্রতিনিধি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যুগ্ম সচিবরা থাকবেন।

কমিটির কাজ হবে, ই-কমার্স সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তর/দপ্তর ও সংস্থাগুলোকে একই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা এবং তাদের মাঝে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানিগুলোকে রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সের আওতায় আনা।

সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগ ওঠা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক লেনদেনের তথ্য এবং মালিকানাধীন সম্পদের বিবরণ, ব্যাংক হিসাবের স্থিতির হালনাগদ তথ্য যোগাড় করা। গ্রাহকের খোয়া যাওয়া অর্থের পুনরুদ্ধার করার পদ্ধতি নির্ধারণ। ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের আর্থিক লেনদেন তদারকির আওতায় আনা ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট-ট্যাক্সের আওতায় আনা।

বাংলাদেশে গত কয়েক মাস ধরে ই-কমার্সে গ্রাহকের প্রতারিত হওয়ার নতুন নতুন ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে। ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, ইভ্যালি, কিউকম, আলেশামার্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। কয়েকদিন পরপরই এসব প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কথিত উদ্যোক্তারা ধরা পড়ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জালে।

এছাড়া আরও ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) নজরদারিতে রয়েছে। এরমধ্যে টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি না দেয়া ও টাকা ফেরত না দেয়া এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০ থেকে ৩২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি সিআইডির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইমাম হোসেন বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা আমরা করেছি। সেখানে ৬০টির মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে আমরা ৩০ বা ৩২টির মতো প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রেখেছি। যারা বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য কিনেছেন। কিন্তু তারা দিনের পর দিন ঘুরেছেন, পণ্য পাননি। এসব মানুষ থানায় গিয়ে মামলা করেছেন। ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে।’

এসব নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রশাসনসহ সরকারের কয়েকটি সংস্থা কাজ করে করে যাচ্ছে। তারপরও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনভাবেও নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে পারছে না সরকার।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রীও জানান, যারা এর সঙ্গে লেনদেন করে অর্থ খোয়াবে তার দায় সরকারও নেবে না। তিনি বলেন, ‘কম মূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা কমে পণ্য কিনতে তো সরকারকে জানায়নি। গ্রাহকদের ক্ষতির দায় সরকার নেবে কেন? তবে যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নীতি রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কাজ করছে। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। সরকার চায় ই-কমার্স ব্যবসা ভালো করুক। এখন পর্যন্ত ১০-১২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।’

NO COMMENTS

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version