বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ৭০ শতাংশ কারখানায় সুশাসন ও মানবাধিকার চর্চা হয় না। অধিকাংশ কারখানায় শ্রম ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের ক্ষেত্রে আইনি দিকগুলো উপেক্ষিত। গতকাল অনলাইনে ‘জাতিসংঘের নীতিকাঠামোর আলোকে পোশাক খাতে শ্রম ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আলোচনায় এ গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব কথা বলেন।
গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ‘কারখানায় শ্রমিকদের মৌখিক ও শারীরিকভাবে হেনস্তার ১৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই সুপারভাইজার ও লাইন ম্যানেজাররা দায়ী। ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সহকর্মীরাই হেনস্তা করেন।’ এ সময় বক্তারা পোশাক খাতে শ্রম ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, শ্রম সচিব মো. এহছানে এলাহী, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার বলেন, ‘পোশাকশিল্পের মালিকেরা ট্রেড ইউনিয়ন মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত নন। তারা ট্রেড ইউনিয়নকে অ্যালার্জি মনে করেন। পোশাকশিল্পের অনেক মালিক গণমাধ্যম কিংবা সভা-সমাবেশে ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষে অবস্থান নেন। তবে তারা ট্রেড ইউনিয়নকে ভয় পান। পোশাকশিল্পের মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে। কারখানার অনেক মালিক দায়িত্ব-কর্তব্য বোঝেন না। অনেকে আবার তা এড়িয়ে যান। শ্রমিকদের মধ্যে অনেকে দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে অবগত নন। আবার শ্রমিক সংগঠনেরও ঘাটতি রয়েছে।’
বাবুল আক্তারের কথার সূত্র ধরে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে পোশাকশিল্পের মালিকদের মধ্যে ভীতি কাজ করে। তবে দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন গঠনকে আমরা স্বাগত জানাই, যদিও দেশে দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’
মুজিবুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে। উভয়পক্ষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংলাপের মাধ্যমে এই দূরত্ব ঘোচানো সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, কারখানার অনেক মালিক মনে করেন, ট্রেড ইউনিয়ন হলে বেতন বাড়াতে হবে। মালিকদের বোঝা উচিত, ট্রেড ইউনিয়ন ক্ষতিকর নয়।’
মো. এহছানে এলাহী বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে সর্বনিম্ন বয়স কত হবে তা নির্ধারণের শেষ পর্যায়ে আছি আমরা। শ্রম বিধিমালা সংশোধনও শিগগিরই শেষ হবে।’