প্রচ্ছদ অর্থনী‌তির বার্তা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে, মুনাফা পুনর্বিবেচনার দাবি

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে, মুনাফা পুনর্বিবেচনার দাবি

0

মুনাফা কমানো ও কর বৃদ্ধির কারণে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ কমতে শুরু করেছে। সম্প্রতি মুনাফা কমানোর পাশাপাশি ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র উৎসে কর দ্বিগুণ এবং ক্রয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে এক বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে ৩৮ শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে আগের হার বহাল রাখার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন প্রবীণ নাগরিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিনিয়র সিটিজেন ফোরাম। সংগঠনের সভাপতি এম মুখলেসুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান চপল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন স্কিমে ৫ হাজার ৩শ’ ৬৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে যা আগের অর্থবছরের জুলাই মাসের তুলনায় ৩ হাজার ৩শ’ ৪০ কোটি টাকা বা ৩৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৮ হাজার ৭শ’ ৫ কোটি টাকার।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পুরোনো সঞ্চয়পত্রের মূল্য ও মুনাফা পরিশোধের পর গত জুলাইয়ে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়ায় ২ হাজার ১শ’ ৪ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাইয়ে এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ এসেছিল ৩ হাজার ৭শ’ ৮ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪শ’ ৮৫ কোটি টাকার। তিনমাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭শ’ ৮৫ কোটি টাকার। পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪শ’ ১০ কোটি টাকার। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৫শ’ ৭০ কোটি টাকার। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের মেয়াদি আমানতে নতুন বিনিয়োগ হয়েছে ৩০ কোটি টাকার। সাধারণ আমানতে বিনিয়োগ হয়েছে ১৬ কোটি টাকা। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ এসেছে ৫৭ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগ হয়েছে ৫ হাজার ৩শ’ ৬৫ কোটি ১ লাখ টাকার। ওই মাসে পুরোনো সঞ্চয়পত্র মেয়াদ পূর্তিতে মূল টাকা পরিশোধ করা হয় ১ হাজার ১শ’ ৬৯ কোটি টাকা। মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২শ’ ৯২ কোটি টাকার।

ফলে জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়ায় ২ হাজার ১শ’ ৪ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের নিট ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে। সে হিসেবে প্রথম মাসে অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) সঞ্চয়পত্র থেকে ৪১ হাজার ৯শ’ ৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা নিট ঋণ নেয় সরকার। যেখানে গত অর্থবছরে মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ দিকে এ খাতের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩শ’ ২ কোটি টাকা করা হয়।

ওই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার অনেক বেশি ঋণ আসায় চলতি অর্থবছরে এ খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের অঙ্কের ওপর ভিত্তি করে সরকার মুনাফার হার পুনঃনির্ধারণ করায় এ খাতের বিনিয়োগ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২১ সেপ্টেম্বর (২০২১) অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফা কমিয়ে আনার কথা বলা হয়। ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে কোন বিনিয়োগকারী সঞ্চয়পত্রে প্রথম ১৫ লাখ টাকার বিনিয়োগের ওপর আগের হারেই মুনাফা পাবেন। ১৫ লাখ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে মুনাফার হার ১ শতাংশ কমবে। ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে ওই বিনিয়গের মুনাফার হার ২ শতাংশ কমবে।

বাংলাদেশ সিনিয়র সিটিজেন ফোরামের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিগত ২১ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রণালয় এক আদেশ বলে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়েছে। শুরুতে কোন ধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপর কোন উৎসে কর কর্তনের বিধান ছিল না। সরকার প্রথমে ৫ শতাংশ ও পরে ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করায় সঞ্চয়কারীরা এমনিতেই প্রাপ্য মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যার ফলে অনেকেই নিত্য নৈমিত্তিক ব্যয় নির্বাহে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন। তার ওপর এখন সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়ে দেয়ায় তাতে সঞ্চয়কারীরা ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো অবস্থায় উপনীত হয়েছেন। সম্প্রতি মহামারীর আকারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ইতোমধ্যে দেশের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন এবং অনেকেই এ রোগসহ অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে আরোগ্য লাভ করলেও হাসপাতাল ও ওষুধের ব্যয় নির্বাহ করতে যেয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘স্বল্প আয়ের লোকজন, বিধবা নারী, পেনশনভোগীরা এবং যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে অক্ষম, তারাই মূলত সঞ্চয়পত্র কেনেন এবং এ সঞ্চয়ের ওপর প্রাপ্ত মুনাফা থেকে সন্তানদের লেখা-পড়া, বিয়ে-শাদী ও সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতির কারণে সঞ্চয়পত্র ক্রেতারা সংসারের ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছিলেন। নতুন করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর কারণে সঞ্চয়কারীদের সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে নাভিশ্বাস উঠবে। এমতাবস্থায়, দেশের প্রবীণ নাগরিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিনিয়র সিটিজেন ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে আগের হার বহাল রাখার জন্য সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ বাড়তে থাকায় চলতি ২০২১ সালের জুলাই শেষে এ খাতে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার ১শ’ ৯৮ কোটি টাকা।

NO COMMENTS

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version