প্রচ্ছদ অর্থনী‌তির বার্তা গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দুই মামলা

গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দুই মামলা

0

প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি ও ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ভ্যাট নিবন্ধন না নেয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভ্যাট আইন অনুযায়ী নিবন্ধন গ্রহণ না করে ভ্যাটযোগ্য সেবা প্রদান করায় আরেকটি মামলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আদায়ের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলা সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাতে প্রতি মাসের সব আয় ও ক্রয়ের তথ্য অনুযায়ী ভ্যাট পরিশোধ করে তা মনিটরিং করার অনুরোধ করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সারের নেতৃত্বে একটি দল গ্রামীণ ব্যাংকর মিরপুরের সেকশন-২ এ অভিযান পরিচালনা করে। আভিযানিক দলটি ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সব নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে। তদন্তকালে গ্রামীণ ব্যাংকের এ অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসে।

তদন্তকালে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসলেও এখন পর্যন্ত ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেনি। অথচ মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১-এর ধারা ১৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী করযোগ্য পণ্যের সরবরাহকারী বা করযোগ্য সেবা প্রদানকারীকে নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কিস্তি সুবিধায় ঋণ প্রদান করে থাকে। সেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রদত্ত ঋণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খরচের বিপরীতে চার্জ, ফি ও কমিশন গ্রহণ করা হয়। ওই সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। একইসঙ্গে করযোগ্য সেবা প্রদান করায় তাদের নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া ভ্যাট বিধিমালা ১৯৯১-এর বিধি ১৮ (ক) অনুযায়ী বিভিন্ন খরচের বিপরীতে উৎসে ভ্যাট কর্তনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন ও অন্য নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পাঁচ বছরের বেশি সময়ে বিভিন্ন সেবা থেকে প্রাপ্ত আয়ের বিপরীতে মোট ৩৪ হাজার ৯১০ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত ভ্যাটের পরমাণ হয় ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯০ টাকা। যেখানে ২ শতাংশ সুদ প্রযোজ্য রয়েছে ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭০৬ টাকা। এ ছাড়া ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন খরচের বিপরীতে উৎসে ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪ টাকা। যার বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধিত হয়েছে ৮ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ৮১৯ টাকা। বকেয়া ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৬ টাকা। ওই সময়ে মাসিক ২ শতাংশ সুদ রয়েছে ৭ কোটি ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭৭ টাকা।

এভাবে অপরিশোধিত ভ্যাট ও সুদসহ মোট ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ৬২৯ টাকা ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। যে কারণে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অন্যদিকে নিবন্ধন গ্রহণ না করায় অন্য মামলা করার পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংককে দ্রুত ভ্যাট নিবন্ধন প্রদান ও মাসিক রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট অফিসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করেছে সংস্থাটি।

NO COMMENTS

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version