বেসরকারি খাতের ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্ট থেকে ‘উধাও’ হওয়া ১৯ কোটি টাকা এক ভিভিআইপি গ্রাহককে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান, ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হাসান ইকবাল।
তিনি জানান, ব্যাংকিং আওয়ারের পর একজন ভিভিআইপি গ্রাহককে ওই টাকা দেয়া হয়েছিল। ব্যাংকিং রুলস ভায়োলেট হলেও এমন ঘটনা নতুন নয়। গ্রাহক-ব্যাংক সম্পর্কের খাতিরে এমন লেনদেন হয়। এ ঘটনায় ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার তিনজনকে প্রত্যাহার ও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলের উপস্থিতিতেই ১৯ কোটি টাকার হিসাব সমন্বয় করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন ব্যাংকের কাছে আমরা ব্যাখ্যা জানাতে চিঠি দিয়েছি। যেহেতু তাদের ওই শাখার সান্ধ্যকালীন ব্যাংকিং নেই, তাই ব্যাংকিং আওয়ারের পর লেনদেন করতে পারে না। তবে এখনও তারা উত্তর দেয়নি। তাদের জবাব পেলে ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ভল্টে ১৯ কোটি টাকার গরমিল পায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন ব্যাংকটির সব শাখার ভল্ট পরিদর্শন করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখা পরিদর্শনে যায়। সকাল ১০টার আগেই তারা শাখায় গিয়ে উপস্থিত হন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শুরুতেই ওই দল শাখাটির ভল্ট পরিদর্শন করে। কাগজে-কলমে শাখার ভল্টে ৩১ কোটি টাকা দেখানো হলেও সেখানে ১২ কোটি টাকা পায় পরিদর্শক দল। বাকি টাকার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কোনও জবাব দিতে পারেননি। উল্টো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করে শাখা কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পক্ষও এ ঘটায় কোন ব্যবস্থা না নেয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়।
প্রতিদিন লেনদেনের শেষ ও শুরুতে ভল্টের টাকা মিলিয়ে রাখার দায়িত্ব শাখা ব্যবস্থাপক, সেকেন্ড অফিসার ও ক্যাশ ইনচার্জের। ভল্টে টাকার হিসাবে কোন গরমিল হলে তা মিলিয়ে নেয়ার দায়িত্ব এসব কর্মকর্তার। অনেক সময় হিসাবের ভুলে সামান্য টাকার গরমিল হতে পারে। তবে বড় অঙ্কের টাকার গরমিল হলে তা ফৌজদারি অপরাধ। সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে অদৃশ্য কারণে এক্ষেত্রে কাউকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়নি। এমনকি থানায় কোন সাধারণ ডায়েরিও করেনি ব্যাংকটি। উল্টো গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার তৎপরতা চলে। শুধু তাই নয়, পরিদর্শনে গিয়ে যারা এ তথ্য উদ্ঘাটন করেছেন, তাদের চাপে রাখা হয় বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্ট পরিদর্শন বাংলাদেশ ব্যাংকের রুটিন ওয়ার্ক। সম্প্রতি সেই রুটিন ওয়ার্কে এমন অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে, ভল্টে ৩১ কোটি টাকা আছে। কিন্তু পরির্দশকরা গিয়ে দেখতে পান, টাকা আছে মাত্র ১২ কোটি। তাহলে বাকি টাকা গেল কোথায় এই অসঙ্গতি ধরা পড়ার পরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত শুরু করে। তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে যে ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশে অনুমোদন পায় সেগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড অন্যতম। প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্র্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মালিকানায় ছিল ব্যাংকটি। এখন ব্যাংকটি পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি শিল্পগোষ্ঠী।