ব্যাংক হিসাব তলবের মাধ্যমে সরকার ও সাংবাদিকদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। কারা এটা করছেন, কী তাদের উদ্দেশ্য তা সরকারকে খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত সমাবেশে এই মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘একটি গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সরকার ও সাংবাদিকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এ দূরত্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? কারা এই কাজটি করছে তা সরকারকে খুঁজে দেখা দরকার।’
প্রেস ক্লাব সভাপতি বলেন, ‘সাংবাদিকদের রাস্তায় দাঁড়ানোর কথা নয়। কিন্তু আজ তাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে বিশ্বের কাছে।’ এতে সরকারেরই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার ফোন নম্বর ও পাসপোর্ট নম্বর জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে আমি ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছি।’
ব্যাংক হিসাব তলবের বিষয়ে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সুস্পষ্ট জানাতে হবে। আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অধিকার কাউকে দেইনি।’ নানাভাবে সাংবাদিক নেতাদের চরিত্র ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া জনগণের সামনে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে কালিমা লেপন করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জনগণ আপনাদের ওপর ক্ষুব্ধ। তারা নানা ভাষায় আপনাদের নিয়ে কথা বলেন। এসব ভাষা আমাদের মুখে আসবে না, আমরা বলতে পারবো না।’
প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের দায়িত্বই হলো আপনাদের দুর্নীতিগুলো তুলে ধরা ও সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরা। আমরা সেটা অব্যাহত রাখবো। সাংবাদিকরা কারও ক্ষতি করে না। সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরে। তারা কোনো টাকার পাহাড় গড়ে তোলে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নামে অভিযোগ না করে প্রতিষ্ঠানসহ কেন? কেন এ চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে, এসব প্রশ্নের জবাব চাই। এ দাবিগুলো আমাদের একার নয় সব সাংবাদিক সমাজের।’
সমাবেশে বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, ‘সংগঠন ও রাজনৈতিক মতাদর্শকে উল্লেখ করে যেভাবে হিসাব চাওয়া হয়েছে তা নজিরবিহীন। আমরা রাষ্ট্রের কাছে এর ব্যাখ্যা চাই। একইসঙ্গে এর নিরসন চাই। দ্রুত সাংবাদিকদের এ উৎকণ্ঠা দূর করতে হবে। গণমাধ্যম ও সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতেই এটা করা হয়েছে।’
এ ঘটনার সন্তোষজনক সমাধান না হলে আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি। পরে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন মোল্লা জালাল।
ডিআরইউয়ের সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজের (একাংশ) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ডিআরইউয়ের সভাপতি মোরসালিন নোমানী, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সোহরাব হাসান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, ইকোনমিকস রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি শারমীন রীমি প্রমুখ বক্তব্য দেন।