দেশে জীবন বিমার প্রায় ত্রিশ শতাংশই মেটলাইফ নামের একটি বিদেশি কোম্পানির দখলে। এছাড়া সাধারণ বিমার অধিকাংশই মাত্র শীর্ষ চার কোম্পানির দখলে।
দুর্যোগপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিমাখাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। তবে বিমাখাতে এখনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এ খাতকে এগিয়ে নিতে তাই বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) কক্সবাজারের হোটেল রয়েল টিউলিপে আয়োজিত ‘বিমা খাতের সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিমাখাতকে এগিয়ে নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা ও জনবলের ঘাটতি পূরণ এবং এমডি বা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
বিমাখাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, দেশের সকল যানবাহন ও সম্পদ বিমার আওতায় আনতে হবে। বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়িয়ে কোম্পানির তথ্য হালনাগাদ নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরামের (আইআরএফ) সিনিয়র সদস্য মনির হোসেন। এতে বলা হয়, দুর্যোগপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিমাখাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতায় সে সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
প্রবন্ধে আরো বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম। কিন্তু বিশ্বে বিমা শিল্পে অবস্থান ৬৮তম। অর্থনীতির তুলনায় ২৮ ধাপ পিছিয়ে আছে বিমাখাত। বৈশ্বিক বিমা শিল্পের তুলনায় বাংলাদেশের বিমা শিল্প দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মাত্র। এখানে মাথাপিছু বিমা ব্যয় কেবল ৯ মার্কিন ডলার।
‘জিডিপি অনুপাতে বিমা প্রিমিয়াম প্রায় দশমিক ৫ শতাংশ। জীবনবিমা দশমিক ৩ ও সাধারণ বিমা দশমিক ২ শতাংশ, যা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। ভারতে এই হার প্রায় ৪ শতাংশ, শ্রীলংকায় ১ দশমিক ২৫ শতাংশ, ভিয়েতনামে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ২ শতাংশ এবং ফিলিপাইনে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ।’
‘বাংলাদেশে ৮০টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি (সাধারণ বিমা ও জীবন বিমা করপোরেশন) আর ব্যক্তিখাতে ৪৬টি সাধারণ ও ৩৪টি জীবন বিমা কোম্পানি রয়েছে। ৫০টি বিমা কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। ২০২০ সালে দেশের বিমা কোম্পানিগুলোর সম্পদের পরিমাণ ৪৫ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৫৩ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ, আলোচ্য বছরে সম্পদ প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে। ২০২০ সালে সাধারণ ও জীবন বিমা হতে প্রিমিয়াম ১৩ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। আগের বছরের চেয়ে যা ৩ শতাংশ কম। গত কয়েক বছরে সাধারণ বিমার গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ শতাংশের কম। আর জীবন বিমার গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ শতাংশ। সাধারণ বিমার অধিকাংশই শীর্ষ চার কোম্পানির দখলে। জীবন বিমার প্রায় ত্রিশ শতাংশই বিদেশি কোম্পানি মেটলাইফের দখলে।’
প্রবন্ধে আরো বলা হয়েছে, বিমাখাতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- আস্থার সংকট, সচেতনতার অভাব, অবহেলিতখাত, কোম্পানির সংখ্যা বেশি, অসুস্থ প্রতিযোগিতা, দক্ষ জনবলের অভাব, ডিজিটালাইজেশন ও যুগোপযোগী পণ্যের অভাব, মালিক প্রভাবশালী কিন্তু কোম্পানি দুর্বল, নিয়ন্ত্রকসংস্থার দুর্বলতা ও জনবলের ঘাটতি, বিমাখাত সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক, এমডি বা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের সুরক্ষা নেই এবং সুশাসনের ঘাটতি ও পারিবারিক আধিপত্য। এগুলো দ্রুত নির্মূল করতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের বিমাখাতকে এগিয়ে নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী বলেন, দেশের বিমাখাত এগিয়ে যাচ্ছে। এ খাতকে এগিয়ে নিতে বিমা কোম্পানির এমডির সুরক্ষা দিতে হবে। আমরা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে এমডিদের সুরক্ষা চাই।