জাহাজে আমদানি-রপ্তানিতে বছরে খরচ ৯ হাজার বিলিয়ন ডলার

0
111

দেশের সমুদ্রপথে জাহাজের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে বছরে খরচ হয় ৯ হাজার বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে মাত্র ১০ ভাগ পরিবহন হয় নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে। ৫০ শতাংশ পণ্য নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি করতে পারলে বছরে সাড়ে চার হাজার বিলিয়ন ডলার সঞ্চয় হবে। পাশাপাশি করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী কটেইনার সংকট দেখা দিয়েছে। জাহাজের পাশাপাশি সুযোগ তৈরি হয়েছে কনটেইনার উৎপাদনের। এটা এখনই কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।

রবিবার (২৪ অক্টোবর) যৌথভাবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। এতে বক্তব্য দেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, একে এনামুল হকসহ বিডা ও এফবিসিসিআইয়ের নেতারা।

কর্মশালায় সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাদের পোশাকশিল্প একদিনে এ অবস্থানে আসেনি। পোশাকশিল্পে ব্যাক টু ব্যাক এলসি ও বন্ডের মাধ্যমে বিক্রি। আমাদের সম্ভাবনাময় শিল্প ছিল জাহাজ তৈরি। ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জাহাজ রপ্তানি করা হয়েছিল। আজ সেই রপ্তানির খবর আর সামনে আসে না। এই সম্ভাবনাময় শিল্পের সমস্যা সমাধান করে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। করোনার পর থেকেই আমাদের কনটেইনার সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকটে সুযোগ এসেছে কনটেইনার উৎপাদনের, আমাদের সেদিকে নজর দিতে হবে। ইলেকট্রনিকস ও আইসিটি সেক্টরেরও সুযোগ এসেছে। শিল্পখাতের জন্য সরকার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। আমরা আশা করি, ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি খাত রপ্তানিতে পোশাকশিল্পকেও ওভারটেক করবে। এখন আইসিটি বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করছে, যা হয়তো দু-তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সমুদ্রে আমাদের ফিশিং নিয়ে কাজ করতে হবে।’ সেখানে যে পরিমাণ মাছ ধরা হচ্ছে ভালো প্রযুক্তি পেলে সেটা আরও অনেক বেশি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ সামুদ্রিক সম্পদের বিশাল অঞ্চল লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মায়ানমারের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোট এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। এর সঙ্গে রয়েছে ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশের সব ধরনের প্রাণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার। দুই বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত এ রায় দুটিকে প্রত্যেকেই ‘বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়’ বলে অভিহিত করেছে। এই সামুদ্রিক এলাকা প্রাকৃতিক গ্যাস ও জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ। এখন এই সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সামুদ্রিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। সমুদ্র অর্থনীতি কেবল নতুন বাজারের সুযোগই তৈরি করে না বরং এটি সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা দেয়। এর আওতায় সম্পদের সমৃদ্ধি বাড়ায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামুদ্রিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা করা ও টেকসইভাবে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষতি না করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নত জীবিকা সংস্থানের লক্ষ্যে সামুদ্রিক পরিবেশের উন্নয়নে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সমুদ্রখাতে অনেক সেক্টর রয়েছে। তবে আমাদের এখনই মেরিটাইম শিপিংসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের বন্দর আছে, সেখানে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। দেশীয় শিল্পের অধিকাংশ অর্থই চলে যাচ্ছে সড়ক দিয়ে পণ্য আনা-নেয়ায়। কারখানা থেকে পণ্য বন্দর পর্যন্ত নিতে একটা বড় খরচ হচ্ছে সেটা কেউ দেখে না, সেটাও হিসাবের মধ্যে আনতে হবে।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here