আগামী ৬ মাস অর্থ ফেরতে চাপ দিতে পারবেন না ইভ্যালির গ্রাহকরা: হাইকোর্ট

0
103

দেশের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি লিমিটেডের নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে অর্থ ফেরতের জন্য ৬ মাস জোরাজুরি না করতে গ্রাহক বা পাওনাদারদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাদের বিষয় নিয়ে ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ে এখন যোগাযোগ করতে নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছেন, কোম্পানি কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণের স্বাধীনতা থাকবে তাদের।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি দেখভাল করতে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশে এমন নির্দেশনা এসেছে। এর আগে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের কোম্পানি কোর্ট ১৮ অক্টোবর ওই বোর্ড সদস্যদের নাম ঘোষণা করে আদেশ দেন।

হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশ অনুসারে পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অপর সদস্যরা হলেন, অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. রেজাউল আহসান, আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহমেদ এবং অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির। মাহবুব কবিরকে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন আদালত।

আদালতের নিয়োগ করা নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে ইভ্যালি স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি, টাকা, শেয়ার, প্রাপ্য এককালীন আমানত (সব ধরনের সম্পদ), ডিবেঞ্চার, গাড়ি, চাবি, ডকুমেন্টসহ অন্য সব কিছু হস্তান্তর করতে ইভ্যালির বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদেশে ইভ্যালির নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খেলাপি পরিচলনা পর্ষদ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা/সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং নিয়ন্ত্রক, কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের প্রতি আলাদা করে নির্দেশনা রয়েছে।

এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশে বলা হয়, ইভ্যালির ব্যবসা-লেনদেনের সূত্রে উদ্ভূত ফৌজদারি মামলা আইন অনুসারে পরিচালনা করতে দুদক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হলো। নির্বিঘ্নে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনায় তিনি আদালত কর্তৃক নিযুক্ত পরিচালনা পর্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। আগামী ২৩ নভেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী দিন রাখা হয়েছে।

গত মে মাসে ইভ্যালিতে ইলেকট্রনিকস পণ্য অর্ডারের পর অর্থ পরিশোধ করে পণ্য ও টাকা না পেয়ে কোম্পানিটির অবসায়ন চেয়ে গ্রাহক ফরহাদ হোসেন গত ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন। এতে ইভ্যালি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বোর্ড গঠনের আরজিও জানানো হয়।

আবেদনের শুনানি নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর একই বেঞ্চ ইভ্যালির ওপর তাদের সব সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তর থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত ইভ্যালির সব নথি ১২ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসকে নির্দেশ দেন। সে অনুসারে নথি দাখিলের পর ১২ অক্টোবর আদালত চার সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেওয়ার অভিমত দেন।

আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী এ এম মাছুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা।

বর্তমানে ইভ্যালির নাম দেশজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত। প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতিমধ্যে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তাঁর স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রাসেল ও শামীমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে তাঁরা কারাগারে আছেন।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here