দেশে ৩০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র

0
191

করোনার আগে দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখনও ৩ কোটি ৫৫ লক্ষ। এদের মধ্যে অতি দরিদ্রের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। করোনার পরে ২০২০ সালে ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’-এর জরিপে দেখা যায়, শুধুমাত্র খাদ্য ও পুষ্টি গ্রহণের মানদন্ডের ভিত্তিতে দেশে দরিদ্র মানুষের হার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ ৫ কোটির উপরে।

সোমবার (১৮ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা যায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২১ সালে পিপিআরসি ও বিআইজিডি-এর জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৩ শতাংশ এবং সানেমের জরিপ অনুযায়ী করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। এ সকল জনগোষ্ঠী প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ ১৮০৫ কিলোক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না। পাশাপাশি পুরাতন দরিদ্রের সাথে নতুন দরিদ্ররাও ২১২২ কিলোক্যালরি খাবার প্রতিদিন গ্রহণ করতে পারছে না।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, শিশু ও নারীদের পুষ্টিহীনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার করোনাকালীন সময়ে আয়ের ক্ষেত্রে ক্রমাগত সংকট বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিদরিদ্র ও দরিদ্রদের পাশাপাশি নিম্ন মধ্যবিত্তের একাংশও নিয়মিত প্রয়োজনীয় খাদ্য কিনতে পারছে না। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য অনুযায়ী মধ্য আয়ের দেশ, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সকল দরিদ্র এবং অতিদরিদ্রদের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সবমিলিয়ে বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা এখনও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বলছে, করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে তরুণ প্রজন্ম। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৪.৮ শতাংশই বেকার হয়েছে। করোনার কারণে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হয়েছে।

আইএলওর হিসাবে, বাংলাদেশে করোনায় ১৬ লাখ ৭৫ হাজার তরুণ-তরুণী কাজ হারিয়েছে। পুনরায় করোনা সংক্রমণ হলে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ কৃষিখাতে খাদ্যসহ বিভিন্ন উৎপাদন এবং কৃষক ও খামারীদের খাদ্য ও জীবিকা উভয় ক্ষেত্রে সংকটের সৃষ্টি হতে পারে। জীবিকার সংকট মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি না মানার ক্ষেত্রে বেপরোয়া করে তুলছে, যা উদ্বেগজনক।

মানববন্ধনে অনেকগুলো সুপারিশমালা উত্থাপন করা হয়। সুপারিশগুলো হলো, দরিদ্রসহ সকল জনগণের জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অতিদরিদ্র এবং নতুনসহ সকল দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আরও বেশি বরাদ্দ প্রদান, দেশব্যাপী বেশি করে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা এবং দুস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য সরাসরি খাদ্য সহায়তা প্রদান করা। মোটা চালসহ সকল খাদ্য-দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি কমাতে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা। দেশের সকল হাসপাতালসমূহে কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেড সংখ্যা বৃদ্ধিসহ অক্সিজেন ও আইসিইউ-এর ব্যবস্থা, টেকনিশিয়ানসহ প্রয়োজনীয় জনবলের জন্য বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি এর পরিচালনায় যথাযথ মনিটরিং এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। চলতি অর্থ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ মানুষের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার জন্য অর্থ বরাদ্দসহ জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা। কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা, কৃষকের পণ্যের বাজারজাতকরণ ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ‘মূল্য কমিশন’ গঠন করা। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব নিরসনে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। সরকারি সহায়তার সঠিক উপকারভোগী চিহ্নিত করার লক্ষ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ডাটাবেজ তৈরি করতে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা।

বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, বিসিএইচআরডি, নারীমৈত্রী, ইয়ুথ এসেম্বলি, ইয়ুথ এগেনেস্ট হাঙ্গার, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের যুব প্রতিনিধিবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ ও বক্তব্য রাখেন।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here