ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

0
89

বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম। সম্প্রতি বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক (জিএইচআই) এ তালিকা প্রকাশ করে। এ বছরের সূচকে দেখা যায়, পাকিস্তান ও ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের অবস্থান ৯২তম আর ভারতের অবস্থান ১০১তম। বাংলাদেশের স্কোর হচ্ছে ১৯.১, পাকিস্তানের ২৪.৭ আর ভারতের ২৭.৫।

জানা গেছে, ২০২১ সালে বিশ্বের ১১৬ দেশের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক (জিএইচআই)। এতে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় এক ধাপ পিছিয়েছে। অবশ্য এবার সমীক্ষা চালানো দেশের সংখ্যাও বেড়েছে। ২০২০ সালে ১০৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম।

এবার ১১৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম। ৭৬তম অবস্থানে রয়েছে নেপালও। এ তালিকায় পাঁচ থেকেও কম স্কোর নিয়ে বেলারুশ, তুরস্ক, উরুগুয়ে, চীন, কুয়েত ও ব্রাজিলসহ ১৮ দেশ শীর্ষে অবস্থান করছে।

প্রতিবছর আয়রল্যান্ডের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ এবং জার্মান সংস্থা ‘ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ’ যৌথভাবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ক্ষুধার পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে যে কোন দেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক অবস্থান, শিশু স্বাস্থ্য এবং সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য ইত্যাদি বিষয়গুলো।

২০২০ সালের ১০৭টি দেশের মধ্যে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম। সেই হিসেবে চলতি বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের একধাপ অবনতি হয়েছে। ভারতের অবনতি হয়েছে গতবারের চেয়ে। ২০২০ সালে ৯৪তম অবস্থানে থাকলেও এবার নেমে এসেছে ১০১ এ যা বাংলাদেশ এবং নেপালের চেয়েও পিছিয়ে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, চারটি বিষয়ের মাপকাঠিতে এই সূচক তৈরি হয়। যার মধ্যে আছে অপুষ্টি, পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের উচ্চতার তুলনায় ওজন, পাঁচ বছরের কম শিশুদের উচ্চতা ও পাঁচ বছরের কম শিশুদের মৃত্যু হার।

ভারতের অবনতির বিষয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ ও অতিমারী সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে ভারতের মানুষের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের মৃত্যুহারের ক্ষেত্রে ভারতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সেইসঙ্গে খাদ্যের অভাবজনিত অপুষ্টির হারও কমেছে ভারতে।

শুধু ক্ষুধার সূচকই নয়, আরও কয়েকটি সূচকে ভারত পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২১ সালে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ। এর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালেও বাংলাদেশ প্রতিবেশি এই বড় অর্থনীতির দেশটিকে পেছনে ফেলেছিল।

আইএমএফ পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি ২০২১ সালে চলতি মূল্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ২ হাজার ১৩৮ দশমিক ৭৯৪ ডলার। অন্যদিকে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ২ হাজার ১১৬ দশমিক ৪৪৪ ডলার।

অর্থাৎ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেশি হবে ২২ দশমিক ৩৫ ডলার। গত বছরও ভারতকে পেছনে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেটি হিসেব করলে পর পর দুই বছর ভারতকে পেছনে ফেলল বাংলাদেশ।

গত বছরও আইএমএফ ডব্লিউইও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেখানে সংস্থাটি জানিয়েছিল, ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। আর ভারতের প্রবৃদ্ধি কমে হবে ঋণাত্মক, অর্থাৎ (-) ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এর ফলে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার ও ভারতের হবে ১ হাজার ৮৮৭ ডলার। সুতরাং গতবার বাংলাদেশ ছিল ঠিক এক ডলারে এগিয়ে। তবে সেটি ছিল পূর্বাভাস।

এখন সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক, (-) ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে শেষ পর্যন্ত তাদের হিসাবে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হয় ১ হাজার ৯৬১ দশমিক ৬১৪ ডলার এবং ভারতের ১ হাজার ৯২৯ দশমিক ৬৭৭ ডলার। সুতরাং আসলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেশি হয়েছিল ৩১ দশমিক ৯৩৭ ডলার।

আইএমএফএর প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০০৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতি অনেক বেশি দ্রুত হারে এগিয়েছে। এই এগিয়ে যাওয়া বজায় ছিল ২০১৬ সাল পর্যন্ত। তবে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে ২০১৭ থেকে। এর পর থেকে ভারতের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়া শ্লথ হয়ে পড়ে। আর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে দ্রুতগতিতে।

এছাড়া সরকারি বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলক ভালো করেছে। আইএমএফের পূর্বাভাস হলো, চলতি বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে মালদ্বীপে, ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ, এরপর ভারতে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।

এ ছাড়া পাকিস্তান ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, নেপালে ১ দশমিক ৮ এবং ভুটানে মাইনাস ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। তবে আফগানিস্তানের জন্য কোন পূর্বাভাস দেয়নি আইএমএফ।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here