নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, পেঁয়াজের দাম বাড়ছে হু হু করে

0
117

কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না নিত্যপণ্যের দাম। পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, মুরগি, সবজি ও তেল থেকে শুরু করে সব পণ্যের দামই লাগামছাড়া পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা, মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা ও অধিকাংশ সবজিতেও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে, কারণ দুর্গাপূজার পর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। আর ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি নেই।

শুক্রবার (৮ অক্টোবর) কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে, যা শুক্রবারের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ৬০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজের দাম কেন এমন বাড়ছে তার কোন সদুত্তর দিচ্ছেন না বিক্রেতারা। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও বাজারে পেঁয়াজ পাওয়া গেছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। কিন্তু পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।

গত বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সে সময় অভিযোগ ছিল, ভারত থেকে রপ্তানির বন্ধ করে দেয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এবারও একই রকম পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, দুর্গাপূজার পরই ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেবে।

এ অবস্থায় পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগামী ১১ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। যেখানে পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। এতে আমদানি পর্যায়ে পেঁয়াজের খরচ কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল করতে নানা পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকায় আমদানি করা পেঁয়াজের চালান নির্বিঘ্ন করতে কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাবনা, ফরিদপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়াসহ আরও কয়েকটি জেলার ডিসিকে পেঁয়াজের মোকাম ও বাজার তদারকির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পেঁয়াজের ট্রাক যেন ফেরি পারাপারের সময় অগ্রাধিকার পায়-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেটাও বলে দেয়া হয়েছে।’

এদিকে দফায় দফায় বাড়তে থাকা ব্রয়লার এবং পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম নতুন করে আরও ১০ টাকা কেজিপ্রতি বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। দেশি মুরগির দাম অবশ্য একটু বেশিই বেড়েছে। ৮০০ গ্রাম ওজনের দেশি মুরগির দাম ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহেও পেঁয়াজ বিক্রি করেছি কেজিপ্রতি ৪৫ টাকায়। আজ পাইকারি কিনেছি ৬৫ টাকায়। বিক্রি করছি ৭০ টাকায়। পেঁয়াজের দাম আগামীতে আরও বাড়বে।’

এছাড়া চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ সবজি। মানভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজি দুটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে শীতের আগাম সবজি শিমের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ বেড়েছে। শুক্রবার বাজারে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কমেছে ঝিঙের দাম। এক সপ্তাহ আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঝিঙের দাম কমে এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আসা শীতের অন্য আগাম সবজির মধ্যে ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।

এছাড়া চিচিঙা, বরবটি, ঢেঁড়শ, পোটল, করলার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, পোটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচাকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাকের আঁটি ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।

কারওয়ান বাজারে আসা ক্রেতা এনামুল হক বলেন, ‘প্রতিবছরই হঠাৎ হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এছাড়া আরও অনেক কিছুর দামই বাড়তি। মাত্র ক’টা টাকা আয় করি, কিনতে কিনতে সব শেষ। এভাবে চলতে থাকলে তো আমরা একটা সময় না খেয়ে মরব।’

আর আগে থেকে বেড়ে যাওয়া চিনি, সয়াবিন তেল ও মসুর ডালের দাম কমেনি এখনও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ৫ সেপ্টেম্বর লিটারে চার টাকা বাড়িয়ে খোলা সয়াবিন তেলের দর খুচরা পর্যায়ে ১২৯ টাকা, পামওয়েল ১১৬ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিনের প্রতি লিটার ১৫৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

চালের মধ্যে নাজিরশাইল ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়, পাইজাম ও লতা বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। স্বর্ণা ও চায়না ইরি বা মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি।

এরপর ৯ সেপ্টেম্বর খোলা চিনির দাম প্রতিকেজি সর্বোচ্চ ৭৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি প্রতিকেজি ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু এই দামে রাজধানীর কোথাও খুচরা বিক্রেতারা সয়াবিন তেল ও চিনি বিক্রি করছেন না। খোলা সোয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৪০ থেকে ১৪৫, বোতলজাত প্রতিলিটার ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকা, খোলা চিনি ৮০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ৮৫ থেকে ৮৭ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। আগের মতোই আমদানি করা মসুর ডাল ৯০ এবং দেশি মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল নেই।

তবে ডিমের দাম কমেছে। ডিম (লেয়ার) প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়, যা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিম ডজন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ১৬০ টাকা।

মাছের বাজারেও অস্বস্তি স্পষ্ট। নদীর চিংড়ির কেজি ৭০০ টাকা। তবে বড় সাইজের চিংড়ির নাম আরও বেশি- ৮০৯ টাকা। লাল চিংড়ি ৪৪০ টাকায় মিলছে। চাষের ট্যাংরা মাছ ৪৬০ টাকা। রুই দিন দিন যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে যাচ্ছে। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আইড় মাছ ৬০০, বোয়াল ৪৫০, কাতলা ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ১৪০ টাকা কেজিতে মিললেও নদীর সরপুঁটি ৪০০ টাকা, তবে চাষের দেশি সরপুঁটি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here