স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারি সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের, আর মাথাপিছু আয় উন্নীত হবে ৩ হাজার ডলারে।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং সিরিজ ২০২১-এ গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনাকালে এমন কথা জানায় ব্যাংকটির গ্লোবাল রিসার্চ টিম। ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রায় ৩০০ ক্লায়েন্ট এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গ্লোবাল হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট এরিক রবার্টসন বলেন, মহামারির কারণে বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের গতি এবং বিতরণ অসম থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন করেছে। আশা করা যায়, একটি জোরদার ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি এবং কৌশলগত অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেশটিকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ সৌরাভ আনান্দ বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এদেশের ২০২১ অর্থবছরের প্রত্যাশিত জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫.৫ শতাংশ এবং আশা করা যায় ২০২২ সালে এর বৃদ্ধি ৭.২ শতাংশে এ উন্নীত হবে। দেশের রপ্তানি চাহিদা পুনরুদ্ধার, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সরকারি বিনিয়োগ দিয়ে এই প্রবৃদ্ধির বাস্তবায়ন সম্ভব। সরকারের লক্ষ্য যেখানে ২০২৬ অর্থবছরের মধ্যে মাথাপিছু জিডিপি ৩০০০ ডলারে উন্নীত করা, মধ্যম আয়ের স্থিতিতে সেখানে পলিসি সাপোর্ট হলো একটি স্মুথ ট্রানজিশনের পূর্বশর্ত।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, সরকারে দূরদর্শী এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপগুলোর কারণে বাংলাদেশ মহামারিকালের বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই বেশ ভালোভাবেই অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে আমরা আশাবাদী। সেইসঙ্গে ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি যেহেতু অব্যাহত রয়েছে তাই অর্থনীতিও ক্রমান্বয়ে ত্বরান্বিত হচ্ছে।
এছাড়া অপেক্ষাকৃতভাবে কম ডেবট-জিডিপি রেশিও দেশের জন্য একটি ফিসকাল রানওয়ে তৈরি করেছে। টেকনোলজি অ্যাডাপশন, টেকনোলজি ইনক্লুসিভনেস এবং আইটিইএস সেক্টরের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে, আর সহায়ক শাসনপ্রণালী বেসরকারি বিনিয়োগ এবং এফডিআইকে ত্বরান্বিত করবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আবারও আমাদের অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছে। এর ফলে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আমরা সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছি। একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ পরিবেশের মাধ্যমেই আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির যাত্রায় অগ্রসর হতে পারবো।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ক্লায়েন্ট সার্ভিস এজেন্ডা শুধু যে তার ক্লায়েন্টদের ব্যাংকিং এবং আর্থিক সেবার ওপরই দৃষ্টি দেয় তা নয়, বরং ক্লায়েন্টদের ইন্ডাস্ট্রি ল্যান্ডস্কেপ, অর্থনৈতিক ট্রেন্ডস এবং বাজার গতিশীলতা সংশ্লিষ্ট গবেষণা সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল রিসার্চ টিম দিয়ে পরিচালিত গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের একটি ফ্ল্যাগশিপ বাৎসরিক ইভেন্ট। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বৈশ্বিক এফএক্স মুভমেন্ট এই অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয়।
এ বছরের অধিবেশনের আলোচ্য বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন গ্লোবাল হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট এরিক রবার্টসন; হেড অব এএসএ এফএক্স রিসার্চ দিভয়্যা দেভেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ সৌরাভ আনান্দ।