ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইন পর্যালোচনা করে নতুন কোন আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, সেই বিষয়ে মতামতের জন্য সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) ও ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়ন ও কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি জানিয়েছেন, ‘ই-কমার্সের জন্য নতুন আইন হবে কি না বা ই-কমার্স কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে কি না, সেটা জানা যাবে আরও এক মাস পর। আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে একটি সাব-কমিটি হয়েছে। সে সাব-কিমিটির রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে নতুন আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে কি না। কমিটি পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।’
মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়ন ও কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা কমিটির সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল ই-কমার্স আইন হবে কি না, সেটাই আজকের আলোচনার মূল বিষয়। আমাদের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন আছে, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন আছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে। বর্তমান আইনগুলো সংশোধন করে নতুন কোন ধারা-উপধারা সংযোজনও হতে পারে। ই-কমার্স কর্তৃপক্ষ করতে বেশ সময় লাগে, এখানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের জড়িত থাকার বিষয় আছে। হঠাৎ যদি ছয় মাসের মধ্যে ডিজিটাল কর্তৃপক্ষ করতে বলা হয়- সেক্ষেত্রে অফিস ও অভিজ্ঞতাসহ সার্বিক বিষয়গুলো দ্রুত করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে ডিজিটাল কমার্স সেলকে আমরা শক্তিশালী করব। এ সেলকে কারিগরি সহায়তাও দেব। আমাদের ভাবনা সাব-কমিটিকে জানানো হয়েছে।’
সফিকুজ্জামান বলেন, ‘সাব-কমিটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক থাকবে, ভোক্তা অধিকারের প্রতিনিধি, কম্পিটিশন কমিশনের প্রতিনিধি, লেজিসলেটিভ ডিভিশনের প্রতিনিধি, এটুআই প্রতিনিধি, এফবিসিসিআই প্রতিনিধি, ই-ক্যাব ও বেসিসের প্রতিনিধি থাকবে। যে ক্ষতি হয়ে গেছে, তা হয়ে গেছে। এটা আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ডিজিটাল সেল আছে। সেলটি একটি এসওপি করেছে। সেটা একটা গাইডলাইন। ফলে সেখানে আইন প্রয়োগের সুযোগ কম। এসওপি প্রয়োগের জন্য যে লিগ্যাল অথরিটি সেটা থাকে না। তাই ডিজিটাল কমার্সকে শক্তিশালী করতে সাব-কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টির নিয়ন্ত্রণ নয়, মনিটরিং করা হবে।’
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ই-কমার্স আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠনের লক্ষ্যে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে কমিটির আহ্বায়ক এবং উপসচিব (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল) মুহাম্মদ সাঈদ আলীকে সদস্যসচিব করা হয়।
আলিশা মার্ট বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করছে, এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের গত ২২ সেপ্টেম্বর যে মিটিং হয়েছিল সেখানে পাঁচ নম্বর সিদ্ধান্ত ছিল, ডিজিটাল কমার্সের সব বিজ্ঞাপনে সতর্কীকরণ ট্যাগ যুক্ত করতে হবে। ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে জেনেছি, এরই মধ্যে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমরা ফুলটাইম এটা নিয়ে কাজ করছি। আমার অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি, কী বিজ্ঞাপন যাচ্ছে তা দেখে রিপোর্ট দিতে। পরে আমরা রিভিউ করব।’
ই-কমার্স বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেগুলো ভালো কোম্পানি সৎভাবে ব্যবসা করছে, আমরা তাদের সুযোগ দিতে চাই। তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে চাই না। তবে আমরা এখন নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা করছি। তাদের আমরা স্পেস দিয়েছি। ই-কমার্সে ভালো অনেক কোম্পানিও রয়েছে, যেখানে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, করোনাকালীন বিশাল সংখ্যক মানুষ কাজের সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশ ই-কমার্সকে লিড দেবে, আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’ বৈঠকে ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার ও ব্যারিস্টার তানজীব-উল-আলমসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।