গত চার দিন ধরে দেশে বন্ধ আছে বিদেশি টেলিভিশনের প্রচার। বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান বা ‘ক্লিনফিড’ সরবরাহের ব্যবস্থায় ব্রডকাস্টারদের রাজি করাতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন বলে বলছেন পরিবেশক, ক্যাবল অপারেটররা।
এখাতের বিশ্লেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশই পৃথবীর একমাত্র দেশ যারা অন্যদেশের কন্টেন্ট বিজ্ঞাপনসহ চালায়, আর কোন দেশ চালায় না। তবে, এই সমস্যা সমাধান কবে হবে কেউ বলতে পারছে না।
সোমবারও (৪ সেপ্টেম্বর) তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেছেন, কেউ কেউ এই ইস্যুতে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ক্লিনফিড দেয়া বিদেশি ২৪টি চ্যানেল বাংলাদেশে চালাতে কোন বাধা নেই।’ ক্যাবল অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ক্লিনফিড চালাতে কোন সমস্যা নেই। তারা বলছেন, যে ২৪টি চ্যানেলের ‘ক্লিনফিড’ আছে সেই তালিকা সরকার সরবরাহ করলে সেগুলো চালাতে আপত্তি নেই।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে হওয়া আইনটি নিয়ে জোর আলোচনা চলছে গত দুই বছর যাবত। আইনটি বাস্তবায়নের আগে সরকারের পক্ষ থেকে পরিবেশক, ক্যাবল অপারেটরদের নিয়ে বহুবার আলোচনা করেছে। তাদের সময় দিয়েছে। কিন্তু গত চার দিন বিদেশি চ্যানেল বন্ধ থাকার কারণে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কথাবর্তা হয়েছে। একটি পক্ষ এ নিয়ে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে।
কিন্ত ক্যাবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ বলেন, আন্দোলনের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমরা আন্দোলন করার কথা বলি নাই। এটা মনে হয় একটু ভুলবোঝাবুঝি হচ্ছে। মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। একটু সময় চেয়েছি।’
বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সাবেক মহাপরিচালক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা অন্যদেশের কন্টেন্ট বিজ্ঞাপনসহ চালায়। অন্যদেশে যেহেতু ‘ক্লিনফিড’ চালায় সেখানে হয় ব্রডকাস্টাররা বিজ্ঞাপন ছাড়া কন্টেন্ট দেয় অথবা পরিবেশকরা বিজ্ঞাপন কেটে দিয়ে ক্লিনফিড চালায়।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘পরিবেশকদের বছরের পর বছর সময় দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত দুই বছর সময় দেয়া হলেও দেশীয় পরিবেশক ও অপারেটররা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।’
দেশীয় পরিবেশকদের পক্ষ থেকে ব্রডকাস্টারদের ‘ক্লিনফিড’ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগের কথা বলা হচ্ছে। দেশীয় পরিবেশক অন-এলায়েন্স-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) সাইফুল হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আইনটা ২০০৬ সালে হলেও বাস্তবায়ন হলো এখন। তবে, গত দুই বছরে চ্যানেলের মালিক বা ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে কথা বলেছি।
তারা আমাদের বলেছে, ‘প্যান্ডামিকের জন্য বিষয়টি নিয়ে পরে আলোচনা করবে। এখন কোন কিছু করা সম্ভব না।’ কারণ, তারা করোনা মহামারীর মধ্যে বাসায় বসে অফিস করেছে। এই টেকনোলজি আপডেট করতে যে ডিভাইজগুলোর প্রয়োজন সেগুলোও ব্রডকাস্টারদের কাছে নেই বলে আমাদের জানিয়েছেন।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচের সব দেশেই ভারতীয় ব্রডকাস্টাররা ‘ক্লিনফিড’ সরবরাহ করে থাকে। সেখানে ভারতের যত চ্যানেল আছে সেখানে কোন ভারতীয় বিজ্ঞাপন দেখানো হয় না। সেসব দেশে সেখানকার বিজ্ঞাপন প্রচার হয়।
এমনকি, আরবি ভাষায় ডাবিং করেও অনুষ্ঠান চালানো হয়। কিন্তু, বাংলাদেশ এত বড় মার্কেট হলেও ব্রডকাস্টাররা ‘ডার্টিফিড’ চালানোর পাশাপাশি বাংলাদেশিদের টার্গেট করে প্রোগ্রাম দেখানো হয়। এমনকি ভারতীয় চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে যে প্রোগ্রাম দেখায় তা তাদের দেশেও প্রচার করে না। বিষয়টি এক ধরনের ‘মিডিয়া’ আগ্রাসন বলেও মনে করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা।
কিভাবে ক্লিনফিড পাওয়া সম্ভব জানতে চাইলে বিটিভির সাবেক এমডি হারুন-অর-রশিদ জানান, ‘ক্লিনফিড’ করতে হলে মূলত দেশীয় পরিবেশকদেরই ধরতে হবে। পরিবেশকরাই ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করবে। ক্যাবল অপারেটররা শুধু ‘ক্লিনফিড’ নিবে।’
যদি কোন ব্রডকাস্টার ‘ক্লিনফিড’ না দেয় সে বিষয়ে তিনি জানান, ‘ক্লিনফিড’ না দিলে ডিস্ট্রিবিউর একটা ডিভাইস দিয়ে সেন্টারলী ক্লিন করে অপারেটরদের দিবে। পৃথিবীর অনেক জায়গায় এমন ‘ক্লিনফিড’ তৈরি করে নেয়া হয়। পরিবেশকরা ‘ক্লিনফিড’ করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে সাইফুল হোসেন বলেন, ‘যারা চ্যানেলের মালিক তাদেরই দায়িত্ব হলো এসব ক্লিন করার। তারা যদি ক্লিন না করে তবে তো আমরা অপরেটর হিসেবে ক্লিন করতে পারি না।’