হিমাগার শিল্প বাঁচাতে ১০ দফা দাবি বিসিএসএ’র

0
108

হিমাগার শিল্পকে বাঁচাতে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। শনিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মো. মোশারফ হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘চলতি বছরে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় মার্চ-এপ্রিল মাসে চারশত হিমাগারে প্রায় ৪০ লাখ টন আলু সংরক্ষিত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ২০ মেট্রিক টন আলু বিক্রি না হলে ১৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার ক্ষতি হবে।’

এমন ক্ষতি থেকে কৃষকদের বাঁচাতে ১০ দফা দাবি জানান সংগঠনটি।

এ সময় এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসতিয়াক আহমেদ, পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুছ, ময়নাকুটি কোল্ডস্টোরেজের চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর মোহাম্মদ ও টিএমএসএসের প্রধান নিবার্হী হোসনে আরা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দাবিগুলো হলো, বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও ব্যবসায়ীদের যে আলু হিমাগারে মজুদ আছে সেই আলুর উপর আর্থিক সহায়তা প্রদানকল্পে সরকার কর্তৃক প্রতি কেজিতে ৯ ‘টাকা ভর্তুকি প্রদানের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তাব করছি। রুগ্ন হিমাগার শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই শিল্পগুলির দায়দেনা নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে প্রকল্প ঋণ ও চলতি মূলধন ঋণের আরোপিত- ‘অনারোপিত সুদ সুদবিহীন ব্লক হিসাবে রেখে ১ বৎসরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে ৪ শতাংশ সরলসুদে ২০ বৎসর মেয়াদে ঋণ পুনঃতফসিলকরণের জন্য প্রস্তাব করছি।

বৈশ্বিক কভিড-১৯ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এবং বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব মহল ত্রাণসামগ্রীর সঙ্গে আলু বিতরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশংসনীয় অবদান রেখেছেন। তদ্রুপভাবে আলুর ব্যবহার বৃদ্ধিকল্পে ত্রাণকার্য, কাবিখা, ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ড এবং ওএমএস-এ আলু বিতরণের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তাব করছি। পাশাপাশি জাতীয়ভাবে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, এতিমখানা, জেলখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলে আলু খাওয়া বাধ্যতামূলক করার জন্য জোর প্রস্তাব করছি।

হিমাগারসমূহে সংরক্ষিত বিপুল পরিমাণ আলু সময়মত বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে সকল জেলা প্রশাসককে জেলার অধীনস্ত সংশ্লিষ্ট ডিলারগণকে হিমাগারসমূহ থেকে সরবরাহ নিয়ে আলু বিতরণের কর্মসূচি গ্রহণের জন্য পরামর্শ প্রদানকরণ। সারাদেশে টিসিবি’র আওতাভুক্ত সব ডিলার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে ওএমএস-এর মাধ্যমে আলু বিতরণের ত্বরিৎ কর্মসূচি গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তাব করছি।

বাকি দাবিগুলো হলো, আলু রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত জাতের বীজ আমদানি ও বীজ উন্নয়ণকরণ এবং আলুর মাটিজনিত রোগবালাই দূরীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণকরণ। রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিদেশে অবস্থিত দুতাবাসগুলোর মাধ্যমে বাজার অনুসন্ধান ও সম্প্রসারণের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তাব করছি। সরকার কর্তৃক ৫০০০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেফার ভেসেল সত্বর ক্রয় করার প্রস্তাব করছি। এর ফলে রপ্তানি সহজীকরণ হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার অর্জন বৃদ্ধি পাবে।

আলু রপ্তানীতে নগদ প্রণােদনা ২০ শতাংশ থেকে উন্নীত করে ৩০ শতাংশ ধার্যকরণের জন্য প্রস্তাব করছি। আলুর উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিপণন ও রপ্তানি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে কৃষি বিপনন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিএডিসি, জাতীয় রাজস্ব বোের্ড, এফবিসিসিআই ও বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠনের জন্য প্রস্তাব করছি।

দেশে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প কারখানা স্থাপনের ফলে আবাদী জমি হ্রাস পাচ্ছে বিধায় ভবিষ্যতে ধান উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, আলুকে দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যরূপে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে সরকারি উদ্যোগে সব গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পদক্ষেপ গ্রহণকরণ।

সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলুর তৈরি খাদ্য মেলা অনুষ্ঠান ও সুশীল সমাজকে নিয়ে প্রচার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তাব করছি। হিমাগারসমূহের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বিদ্যুৎ বিল স্থগিত রেখে পরবর্তীতে সারচার্জ ছাড়া কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের সুযোগ প্রদানের জন্য প্রস্তাব করাছি। আলু একটি কৃষিপন্য, আমরা কৃষকের আলু সংরক্ষণ করি এবং কৃষক থেকে আলু ক্রয়করি। হিমাগার কৃষিভিত্তিক শিল্প বিবেচনায় এই শিল্পের উৎস কর প্রত্যাহরের প্রস্তাব করছি।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here