সৌদি আরব সফর সফল দাবি করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) এবং পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) চুক্তি সই করতে সৌদি সরকার সম্মতি দিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে চুক্তি সই হবে।
দেশে সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরির উদ্দেশ্যে আরব রাষ্ট্রটি সফর শেষে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সালমান।
তিনি বলেন, ‘খুবই ভালো আমাদের কথা হয়েছে। আমরা দেখেছি, আমাদের এখানে বিনিয়োগ করার জন্য তারা খুব আগ্রহী। বিশেষ করে সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিনিয়োগমন্ত্রী বলেছেন যে, ওনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। তারা একটা দল নিয়ে খুব শীঘ্রই আসবেন। আমাদের যে একটা জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি আছে, সেটার একটা মিটিং হবে। সেই মিটিংয়েও আমরা আশাবাদী। (সৌদির) বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, উনি অথবা বিনিয়োগমন্ত্রী ওনারা নিজে আসবেন।’
সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের অবস্থানকালেই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘সৌদি বাদশাহ সালমানের নেতৃত্বে যে মন্ত্রিপরিষদটা হয়েছিল মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর), সেখানে ওনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, আমাদের সঙ্গে জিটুজি, পিপিপি অ্যাগ্রিমেন্ট যেটা করার কথা ছিল, অনেক দিন থেকে সেটা পেন্ডিং আছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা সেটা সই করবে। ভার্চুয়ালি এটা সই করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমি আশা করি, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই চুক্তিটা আমাদের সই হয়ে যাবে।’
কোন কোন খাতে সৌদি আরব সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয় সরকারপ্রধানের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টার কাছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুটো প্রজেক্টের বিষয়ে কথা বলেছি, যেটাতে আমরা রিকোয়েস্ট করেছিলাম, যেটাতে তারা বলেছেন যে, তারা ইন্টারেস্টেড। তবে ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ আরও অনেক কাজ করা বাকি আছে। একটা হলো ঢাকা থেকে পায়রা রেল। সেটাতে তারা ইন্টারেস্টেড আছে। প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে করতে চায় বাংলাদেশ, বিষয়টি তারা ভেবে দেখবেন বলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছে সৌদি সরকার।’
কক্সবাজারের উন্নয়নে সৌদি আরবের বিনিয়োগ আশা করে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আরেকটা আমরা বলেছি কক্সবাজারে উন্নয়ন। আমরা কক্সবাজারের ট্যুরিজম, পুরো কক্সবাজারের ডেভেলপমেন্টর জন্য। সেটাতেও তারা খুব ইন্টারেস্টেড। আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি করলে, তাদের সঙ্গে শেয়ার করলে তখন এটা নিয়ে এগিয়ে আসবেন। চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন বে টার্মিনাল ও পতেঙ্গা টার্মিনালে বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি সরকার। তারা প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা বলেছি আমাদের জিটুজি অ্যাগ্রিমেন্ট না হওয়া পর্যন্ত তাদের ওই প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করতে পারি না। চুক্তি হয়ে গেলে আমরা বিষয়টা দেখব।’
একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগ করতেও সৌদি আরবের প্রতি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সালমান বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে, আমরা একটা স্পেশাল ইকোনমিক জোন তাদের দিতে চাই। এই প্রস্তাবেও তারা খুবই পজেটিভ রেসপন্স করেছে। প্রথম মিটিংয়েই আমি এই প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম ওনাদের বাণিজ্যমন্ত্রীকে। এটা তাদের কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং প্রস্তাব। তারা বলেছে, এটা নিয়ে তারা স্টাডি করে আমাদের জানাবে।’
দেশটির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানান সালমান। তিনি বলেন, ‘বাওয়ানি নামে একটা কোম্পানি বেজাকে (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) একটা প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে ইকোনমিক জোনের জন্য। ইকোনমিক জোন এক্সক্লুসিভলি ফর সৌদি অ্যারাবিয়া। এই প্রস্তাব নিয়ে ওরা কাজ করতেছে।’
সফরের সার্বিক মূল্যায়ন নিয়ে সালমান বলেন, ‘ডেফিনিটলি সফল হয়েছে। আমরা অনেক খুশি। আরেকটা বিষয় আমাদের ডেলিগেশনকে ওনারা যেভাবে রিসিভ করেছেন, যে সম্মানটা আমাদের দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটাকে তারা খুবই অ্যাপ্রিশিয়েট করেছে। তারা আসলেই এখন মনে করে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।’
এ বছরের ২৮ ও ২৯ নভেম্বর ঢাকায় একটি বিনিয়োগ সম্মেলন করা হবে বলেও জানান সালমান। তিনি বলেন, ‘সেখানেও আমরা ওনাদের দাওয়াত দিয়েছি। তারা আমাদের কনফার্ম করেছেন যে, তারা সেই বিনিয়োগ কনফারেন্সে যোগদান করবেন। একটা লিস্ট দিয়ে আমরা বলেছিলাম এতগুলো আইটেমে ডিউটি ফ্রি অ্যাকসেস দেয়ার জন্য। তারা বলেছে সেটা বাইলেটারেলি না করে তাদের একটা জিসিসি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট আছে। তারা বলছে, জিসিসির মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে একটা এফটিএ অথবা পিটিএ করার জন্য। তারা কাজ করতে চায়।’