‘সয়াবিন মিল’ রপ্তানি বন্ধ চায় পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা

0
147

‘সয়াবিন মিল’ রপ্তানির ফলে দেশে পশু খাদ্যের দাম ব্যাপক বেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা করে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলন করে এই আহ্বান জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উদ্যোক্তারা বলেন, ‘সাশ্রয়ী মূল্যে দেশের মানুষের জন্য ডিম, দুধ, মাছ, মাংসের উৎপাদন ও যোগান নিশ্চিত করছে দেশীয় পোলট্রি, মৎস্য ও ডেইরি খাত। সাম্প্রতিক সময়ে হাঁস-মুরগি, মৎস্য ও গবাদিপশুর খাদ্য তৈরির অত্যাবশ্যকীয় একটি উপকরণ ‘সয়াবিন মিল’ রপ্তানির অনুমতি প্রদান করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে খামারি ও উদ্যোক্তাদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিখাদ্য তৈরিতে প্রধান যে কাঁচামালগুলো ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে, ভূট্টা, সয়াবিন মিল, গম, আটা, ময়দা, ভাঙা চাউল, চাউলের কুড়া, ফিশ মিল, সরিষার খৈল, তৈল, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি অন্যতম। এর মধ্যে দুটি উপকরণ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ভূট্টা এবং সয়াবিন মিল। ভূট্টার ব্যবহার প্রায় ৫০-৫৫ শতাংশ এবং সয়াবিন মিলের পরিমান প্রায় ২৫-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর থেকে ভূট্টার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশীয় মোট চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ ভূট্টা দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। তবে সয়াবিনের উৎপাদন নিতান্তই নগণ্য।’

অধিকাংশ কাঁচামাল বাইরে থেকে আমদানি করা হয় জানিয়ে বলেন, ‘দেশের ফিড মিলগুলোতে ব্যবহৃত কাঁচামালের অধিকাংশই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বর্তমানে চাহিদাকৃত ‘সয়াবিন মিল’ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। দেশে ‘সয়াবিন মিল’ এর মোট চাহিদা বছরে প্রায় ১৮-২০ লক্ষ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৫-৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এবং অবশিষ্ট ২০-২৫ ভাগ আমদানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। দেশে উৎপাদিত সয়াবিন মিলের একমাত্র ক্রেতা হচ্ছে পোলট্রি, মৎস্য, ক্যাটল ও ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও সাধারন খামারিরা। সয়াবিন মিলের রপ্তানির সিদ্ধান্তে খামারিরা উদ্বিগ্নের কারণ, ডিম, মাছ, মুরগি উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ খরচই হয় ফিড ক্রয় বাবদ। তাই ফিডের মূল্য বৃদ্ধি পেলে খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়ে। অন্যদিকে খরচের বিপরীতে পণ্যের নায্য দাম না পাওয়ায় বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে হয় তাদের।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘সয়াবিন সীড থেকে সয়াবিন তৈল বের করার পর অবশিষ্ট খৈল থেকে তৈরি হয় ‘সয়াবিন মিল’। দেশের মানুষের স্বার্থে শূণ্য শুল্ক সুবিধায় আনা সেই সয়াবিন সীড থেকে উৎপাদিত সয়াবিন মিলই এখন ৩-৪টি সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান মুনাফার স্বার্থে রপ্তানি করছে। অতীতে কখনও ভারতে সয়াবিন সীড কিংবা সয়াবিন মিল রপ্তানি হয়নি বরং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমান সয়াবিন মিল আমদানি করা হয়ে থাকে। অতীতে চাহিদা মেটাতে সিংহভাগ সয়াবিন মিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হলেও এলসি করা, অতিরিক্ত জাহাজ ভাড়া, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে জটিলতা, ল্যাব টেস্টের জটিলতা, বিলম্ব মাশুল, ইত্যাদি নানাবিধ জটিলতার কারণে সয়াবিন মিল আমদানির পরিমান সাম্প্রতিক বছরগুলো ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে।’

সয়াবিন মিল বিদেশ থেকে আমদানি করতে অনেক সময় লাগে জানিয়ে বলা হয়, ‘বর্তমানে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন মিল আমদানি করতে হলে এলসি করা থেকে শুরু করে বন্দরে মাল এসে পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৫০ দিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সময় লাগে ৭০ দিন। ভারত থেকে সড়কে ৭-১০ দিন, কনটেইনারে ১৫-২০ দিন। বিশ্ববাজারে এবং সেই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে সয়াবিন মিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সে দেশের পোলট্রি, ডেইরি ও মৎস শিল্প রক্ষা করতে এবং স্বল্পতম সময়ে বাংলাদেশ থেকে সয়াবিন মিল আমদানির জন্য আগ্রহ বেড়েছে ভারত, নেপাল প্রভৃতি দেশের ফিড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর। আমাদের উদ্বৃত্ত থাকলে রপ্তানি করতে কোন অসুবিধাই ছিল না কিন্তু দেশের চাহিদা যখন দেশীয়ভাবে পূরণ করা যাচ্ছে না, তখন রপ্তানির সিদ্ধান্ত কেন?’

বাংলাদেশি গণমাধ্যমে ‘সয়াবিন মিল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার’ এমন খবর জাতীয় সংবাদ-মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন মিলের দাম কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা বৃদ্ধি করেছে। সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সয়াবিন মিলের সংকটের কারণে অনেক ফিডমিলের উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। প্রচুর খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, খামারি পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে।

‘বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভারতে সয়াবিন মিল রপ্তানি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আমরা বাণিজ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে অবিলম্বে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের জন্য আবেদন জানাই। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় হতে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের সুস্পষ্ট মতামতসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি প্রদান করলে এগুলোর কোন কিছুই আমলে না নিয়ে একতরফা ভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানির সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছে এবং ভারত ও নেপালে সয়াবিন মিলের রপ্তানি চালু রয়েছে। শুধু তাই নয়, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সয়াবিন মিল বন্ধের আদেশ প্রদান করলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের কারণে তা পুনরায় প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

 

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here