পতনে সপ্তাহ পার, বিনিয়োগকারীরা হারালো ছয় হাজার কোটি টাকা

0
299

আগের সপ্তাহের মতো গত সপ্তাহেও পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। সপ্তাহটিতে উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচকই কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনি দর। টাকার পরিমাণে লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা বেশি হয়েছে। আর পতনের কারণে সপ্তাহটিতে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকার মূলধন।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫১ কোটি ২৪ লাখ ৬১ হাজার টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৪২ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীরা ছয় হাজার ৩৫২ কোটি ৬৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাত হাজার ৫৫০ কোটি ১৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৫৩ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ছয় হাজার ৪৩ কোটি ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৩৫ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন এক হাজার ৫০৭ কোটি ৯ লাখ ৯১ হাজার ৭১৮ টাকা বা ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩.৮৭ পয়েন্ট বা ০.২০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৬২.৩৬ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩৮.৭৭ পয়েন্ট বা ২.৫৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৬০.৪৩ পয়েন্ট বা ২.২৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৭৯.৩৯ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৬৩৮.৯১ পয়েন্টে। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৭৮টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২০৫টির বা ৫৪.২৩ শতাংশের, কমেছে ১৫৫টির বা ৪১ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির বা ৪.৭৭ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২৫৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮২২ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২২৮ কোটি ৯৮ লাখ ১২ হাজার ২৪৮ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ২৯ কোটি ৯৯ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৪ টাকা বা ১৩ শতাংশ বেড়েছে।

সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৪.৪৫ পয়েন্ট বা ০.৩১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬২৮.৯০ পয়েন্টে। সিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ৪১.৪৩ পয়েন্ট বা ০.৩৩ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ৩০৫.৫০ পয়েন্ট বা ২.০৬ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ২৩.৭০ পয়েন্ট বা ১.৫২ শতাংশ এবং সিএসআই ১৫.৪৯ পয়েন্ট বা ১.৯৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২ হাজার ৩৯২.৪৬ পয়েন্টে, ১৪ হাজার ৪৮৫.৮০ পয়েন্টে, ১ হাজার ৫৩৪.৯০ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২৭৫.৪৫ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৩৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৭৪টির বা ৫১.৬৩ শতাংশের দর বেড়েছে, ১৪৮টির বা ৪৩.৯২ শতাংশের কমেছে এবং ১৫টির বা ৪.৪৫ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষস্থান দখল করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৮৩৯ কোটি ৯২ লাখ ৮৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৫ কোটি ৮ লাখ ৩১ হাজার ৩৯৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১১.১২ শতাংশ। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স। কোম্পানিটির ১ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৩৯৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৪৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা। কোম্পানিটির ৩ কোটি ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ১৫৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৩৬০ কোটি ৬৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

লেনদেনের তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংক ৩২৯ কোটি ৪৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকার, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ২৮৩ কোটি ১২ লাখ ১০ হাজার টাকার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ২৫১ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকার, ফরচুন সুজের ২৪১ কোটি ১৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার, জেনেক্স ইনফোসিসের ২২২ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার টাকার, লাফার্জ হোলসিমের ১৭২ কোটি ৭৬ লাখ ৮২ হাজার টাকার, স্কয়ার ফারমার ১৫১ কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার টাকার লেনদেন হয়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২০৫টির বা ৫৩.৬৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে হামিদ ফেব্রিক্সের। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে হামিদ ফেব্রিক্সের ক্লোজিং দর ছিল ১৮ টাকা ৪০ পয়সা। আর গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস কোম্পানিটির ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১২ টাকা ২০ পয়সা বা ৬৬.৩০ শতাংশ। এর মাধ্যমে হামিদ ফেব্রিক্স ডিএসইর সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।

ডিএসইতে সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধি শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এশিয়া ইন্সুরেন্সের ৩১.৭ শতাংশ, মালেক স্পিনিংয়ের ২৩.৭৩ শতাংশ, সোনালি পেপারের ২৩.৩৯ শতাংশ, বে-লিজিংয়ের ১৬.৩৭ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিড মিলের ১৬.২৫ শতাংশ, ফু-ওয়াং ফুডের ১৫.০৮ শতাংশ, এএফসি অ্যাগ্রোর ১৪.৫৯ শতাংশ, শেফারড ইন্ডাস্ট্রিজের ১৪.৫৭ শতাংশ এবং আরডি ফুডের ১২.৯৫ শতাংশ দর বেড়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৫৫টির বা ৪০.৫৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। সপ্তাহটিতে শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি কমেছে হাইডেলবারগ সিমেন্টের। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে হাইডেলবারগ সিমেন্টের দর ছিল ৩১৯ টাকা ৬০ পয়সা। আর গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে এর ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ২৭৩ টাকা ৯০ পয়সায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে দর কমেছে ৪৫ টাকা ৭০ পয়সা বা ১৪.৩০ শতাংশ কমেছে। এর মাধ্যমে হাইডেলবারগ সিমেন্টের ডিএসইর সাপ্তাহিক দর পতনের তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।

ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর কমেছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ১৪.২৯ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ১৩.৬২ শতাংশ, মেঘনা পেটের ১২.৯৩ শতাংশ, ওয়াইম্যাক্সের ১২.২৮ শতাংশ, আরামিট লিমিটেডের ১২.১১ শতাংশ, মীর আক্তার হোসেনের ১১.২৮ শতাংশ, স্টাইলক্রাফটের ১১.০৫ শতাংশ, সামিট পাওয়ারের ১০.৮২ শতাংশ এবং সালভো কেমিক্যালের ১০.৭৬ শতাংশ।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here