তৈরি পোশাকশিল্পের মৌলিক কাঁচামাল তুলার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকায় বস্ত্র ও পোশাক খাতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
রাজধানীতে সোমবার প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা জানান এ উদ্বেগের কথা।
তুলার দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারি নীতি সহায়তার পাশাপাশি জরুরিভাবে সমন্বিত নীতি প্রণয়নের দাবি জানান বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ), তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ রপ্তানি খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
বিশ্ববাজারে তুলার দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সংকটজনক পরিস্থিতি তুলে ধরতে এ যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কয়েক মাস ধরে বিশ্ববাজারে তুলার দাম বেড়ে চলেছে। গত এক দশকের মধ্যে এখন তুলার দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তুলার দাম যেভাবে বাড়ছে তা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে তা কেউ বলতে পারছে না।
সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখে প্রতি পাউন্ড তুলার দাম ছিল ৯০ সেন্ট। এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১২০ সেন্টে। প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে দাম।
নেতারা বলেন, শুধু তুলার দাম বাড়ার কারণে বস্ত্র ও পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা নয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বর্ধিত জাহাজ ও কন্টেইনার ভাড়া, বন্দরের যানজটসহ অন্য অনেক সমস্যা। সব মিলিয়ে বস্ত্র ও পোশাক খাত বিপর্যের মুখে পড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, তুলা পোশাকশিল্পের প্রধান মৌলিক কাঁচামাল। তুলা থেকে সুতা, এরপর সুতা থেকে কাপড় এবং তা থেকে পোশাক তৈরি হয়। বাংলাদেশে ৯৯ শতাংশ তুলা আমদানি করা হয়।
তুলার দাম বাড়ার ফলে সুতার দাম বাড়ছে। ফলে কাপড়ের দামে তা প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় তৈরি পোশাক খাত তীব্র প্রতিযোগিতায় পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে। কারণ, ক্রেতারা বেশি দামে বাংলাদেশি পোশাকপণ্য কিনতে চাচ্ছে না। এ অবস্থায় তুলার দাম স্থিতিশীল রাখা জরুরি বলে মনে করে বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহাম্মদ আইউব।
এ সময় বিকেএমইর নিবার্হী সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ টেরিটাওয়াল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহদাত হোসেনসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেএমইএর মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের স্বার্থে সুতার বাজার স্থিতিশীল রাখা উচিত। সুতার দাম বাড়ার বিষয়ে আমরা একটা সতর্ক বার্তা দিলাম। যাতে করে বায়ারদের সঙ্গে দরকষাকষিতে পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা যায়।’
বিটিএমএর ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনই সুতার দাম বাড়ছে। কোথায় গিয়ে যে ঠেকে তা বলা কঠিন। বিশ্ববাজারে সব কিছুর দাম বাড়ছে। শুধু বাড়ছে না বাংলাদেশি পোশাকের দাম। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।’
টেরিটাওয়াল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘তুলার দাম না কমলে রপ্তানিমুখী শিল্পে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।’
বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহাম্মদ আইউব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার বাড়তি দাম বিবেচনায় নিয়ে দেশীয় তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত ক্রেতাদের সাথে দরকষাকষি করা।’