আমরা খাদ্যে সয়ংসম্পন্ন হয়েছি, এবার দরকার পুষ্টিকর খাবার : কৃষিমন্ত্রী

0
83

বাংলাদেশ খাদ্যে সয়ংসম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘অনেক আগেই আমরা খাদ্যে সয়ংসম্পন্ন হয়েছি। এবার সেই খাবারটা যেন পুষ্টিকর হয় সেদিকে এগিয়ে যেতে হবে। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’

রবিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর : কৃষির রূপান্তর ও অর্জন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের সমাপনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এছাড়াও খাতের বিশেষজ্ঞরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দৈনিক বণিক বার্তা ও বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার জার্নালিস্ট ফোরাম যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেকটাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সারা পৃথিবীই তা বলছে। এই যে করোনা পরিস্থিতিতেও কেউ না খেয়ে নেই, খাদ্যের সংকট নেই, হাহাকার নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে আমরা পুষ্টিজাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিতে চাই। সেজন্য বাংলাদেশকে আমরা আধুনিক কৃষিতে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশ দানাজাতীয় খাদ্যে অনেক আগেই সফল হয়েছে। সেটাকে যদি আমরা পুষ্টিজাতীয় খাবারে নিয়ে যেতে পারি অর্থাৎ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদিতেও স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সফল হতে হবে।’

বাংলাদেশের মানুষ ভাত বেশি খায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক বেশি ভাত খাই। যদি ভাতের এই কনজাম্পশন (খাওয়া) কমাতে পারি তাহলে আমাদের চালের ব্যবহার অনেক কমে যাবে। আমরা ৪০০ গ্রাম চাল খাই প্রতিদিন, পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ ২০০ গ্রামের বেশি চাল খায় না। সেজন্য কৃষিপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পুষ্টিজাতীয় শস্য উৎপাদনে আরও উন্নতি করতে হবে।’

বাংলাদেশের কৃষিপণ্য আন্তর্জাতিক বাজার দখল করবে আশা করে তিনি বলেন, ‘দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য আন্তর্জাতিক বাজার দখল করবে। বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে না, আমরা সারা বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ করতে পারব। কৃষিপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দেশে সারা বছর আম পাওয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর এবং এখানে বিশুদ্ধ পানি খুব সহজলভ্য। ২০ থেকে ৩০ ফুট নিচেই বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়, যা অন্য কোন দেশে পাওয়া যায় না। মাটির উর্বরতা ও পানির সহজলভ্যতার সঠিক ব্যবহারে দেশ কৃষি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে।’

বর্তমানে অনেক শিক্ষিত ছেলে কৃষিতে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এক সময় কৃষিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হতো। চাষা শব্দটা গালি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরাও কৃষিতে আসছে। তাদের নিয়ে দেশের কৃষিকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করব।’

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও ভোগের সঠিক পরিসংখ্যানের অভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পেঁয়াজের জ্বালায়ই আমি অস্থির হয়ে পড়েছি। পরিসংখ্যানের একটা ঝামেলা রয়েছে। আমাদের প্রয়োজন ২৪-২৫ লাখ টন পেঁয়াজ। উৎপাদনও হয় এমনই ২৫-২৬ লাখ টন। তাহলে আমদানি কেন? এমন প্রশ্ন আসে। সেক্ষেত্রে বক্তব্য হচ্ছে প্রায় ২০ শতাংশ পেঁয়াজ আমাদের নষ্ট হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকেই আমাদের পেঁয়াজ কমতে থাকে। তখন ভারত থেকে আনতে হয়। এক্ষেত্রে ভারতের ওপর আমরা ৯০ শতাংশ নির্ভরশীল। ভারত বন্ধ করে দিলে অথবা দাম বাড়ালে এর প্রভাব বাজারে পড়ে।’

কৃষিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা পেঁয়াজের এমন বীজ আনেন যাতে সেপ্টেম্বর অক্টোবরে আমরা পেঁয়াজ পাই। উৎপাদন বাড়ানো গেলে, নষ্ট কমলে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে পেঁয়াজের বাজারে কোন সমস্যা হবে না।’

পণ্যের মজুত ও চাহিদা সম্পর্কে কৃষি মন্ত্রণালয় সঠিক তথ্য দেয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর কৃষি মন্ত্রণালয় হিসাব দিলো ১ কোটি ৫ লাখ টনের মতো আলু উৎপাদন হবে। আর আমরা ৭০-৭৫ লাখ টন আলু খাই। তার মানে আলু সারপ্লাস থাকবে। কিন্তু গত বছরের বাজারের চিত্র কিন্তু সেটা বলে না। গত বছর আলুর দাম ৪০ টাকায় ঠেকলো। কোল্ডস্টোরেজ থেকে বেরোতে বেরোতে আলু ৩৫-৩৬ টাকা হয়ে গেলো, আলু এক্সপোর্ট হলো না। তার মানে হিসাবে একটা গন্ডগোল রয়েছে। হয় আলুর উৎপাদন কম হয়েছে, নয়তো আলুর চাহিদা আরও বেশি।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। তিনি বলেন, ‘গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের কৃষিতে বিশাল রূপান্তর হয়েছে। ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিন থেকে চারগুণ। আজ আমরা বাণিজ্যিক কৃষির কথা ভাবছি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল এলাকায় নদীর পানি ব্যবহারের মাধ্যমে ধানের আবাদ বাড়ান সম্ভব। ধানের এই চাষাবাদ বাড়িয়ে ক্রমবর্ধমান খাদ্যচাহিদা পূরণ করেও ২০৫০ সালে ৪৮ লাখ টন উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব।

কৃষিতে বেসরকারি খাতের অবদান অনেক উল্লেখ করে এসিআইএ অ্যাগ্রিকালচারের প্রধান নির্বাহী এফএইচ আনসারী বলেন, ‘বেসরকারি খাত কৃষির উন্নয়নে সরকারকে সহযোগিতা করছে। এখন ৯৫ ভাগ হাইব্রিড ধানের বীজ, ৯৬ ভাগ সবজি বীজ, ৯৯ ভাগ পাটবীজ প্রাইভেট সেক্টর সরবরাহ করে। বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সারা বিশ্বে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, এফএও বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রবার্ট ডি সিম্পসন এবং ইউএসএআইডি বাংলাদেশের মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন স্টিভেন্সসহ আরও অনেকে।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here