অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন বলেছেন, বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্য চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশি প্রায় ৯৫ শতাংশ পণ্য কোরিয়ান বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে।
রোববার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে চিটাগাং চেম্বারের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন বলেন, বাংলাদেশ-কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম সরকারি উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) গ্রহণকারী দেশ। তবে আগামী দিনগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উভয় দেশ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিকভাবে আরও সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারে। আগামী বছর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হবে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী দেশ। যাদের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার। কোরিয়াতে বাংলাদেশের রফতানি ৩৫০ মিলিয়নের কম। অন্যদিকে দেশটি থেকে আমদানি প্রায় এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। কাজেই এ বিশাল বাণিজ্যঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কোরিয়া প্রায় ১২-১৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরিপোশাক আমদানি করে থাকে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে কোরিয়াতে রফতানি হয় মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলারের তৈরিপোশাক।
অনুষ্ঠানে তৈরি পোশাক রফতানিতে রুলস অব অরিজিন সহজীকরণ, প্রধান আমদানিকারকদের সঙ্গে বাংলাদেশি রফতানিকারকদের যোগাযোগ স্থাপন এবং যৌথ উদ্যোগে আরএমজি ও টেক্সটাইল খাতে কারখানা স্থাপন করে কোরিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, দুইশর বেশি কোরিয়ান কোম্পানি বাংলাদেশে সফলভাবে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ক্রমে বাড়ছে।
কোরিয়া ট্রেড সেন্টারের ডাইরেক্টর জেনারেল কিম ডং হাইঅন বলেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ আমাদের অন্যতম প্রধান কাজ। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো ও সরকারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে থাকি।
এসময় চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হার্বার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান বুসান কোরিয়ান পোর্টের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সমুদ্রপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের আহ্বান জানান।
সভায় বক্তারা ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা সহজীকরণ, চট্টগ্রামে একটি কোরিয়ান হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলেন।
এছাড়া গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ও সামুদ্রিক অর্থনীতির সুবিধা আদায়ে একসঙ্গে কাজ করা, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা দেওয়া, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা, স্ক্র্যাপসহ অন্যান্য আমদানিতে ব্যয় হ্রাস করা, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের কথা বলেন।
এসময় ব্যবসায়ীরা ফেব্রিক্স উৎপাদনে কারিগরি সহযোগিতা, স্ক্রিন কেয়ার প্রোডাক্টস, কোরিয়ান মেলা, কোরিয়ান ইন্টার্ন পাঠানো, নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সহযোগিতা ও তরুণ প্রজন্মকে কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।