ই-কমার্সে ভোগান্তি কমাতে কেন্দ্রীয় অভিযোগ সেল গঠন

0
91

ই-কমার্স বাংলাদেশে একটি উদিয়মান খাত। ধীরে ধীরে এই খাতটি বড় হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় খাতটির প্রসার খুব দ্রুত হয়েছে। একই সঙ্গে এই খাতে শুরু হয়েছে ক্রেতাদের ভোগান্তি। তাই এই ভোগান্তি কমাতে এবং ক্রেতাদের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করতে একটি কেন্দ্রীয় অভিযোগ সেল গঠন করা হচ্ছে। পণ্য কিনে কোন ধরনের ভোগান্তিতে পড়লে এই কেন্দ্রীয় সেলের মাধ্যমে অভিযোগ করতে পারবেন।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) সূত্র জানায়, ইক্যাবই কেন্দ্র্রীয় অভিযোগ সেল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে কাজ করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)। অনলাইন মার্কেটপ্লেস একশপের কারিগরি সহযোগিতায় ইতোমধ্যে এই সেল তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

সূত্র আরও জানায়, কেন্দ্রীয় অভিযোগ সেল চালু হলে অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যকার বিরোধের সব ধরনের তথ্য কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে থাকবে। ফলে সমস্যা অভিযোগের হার অনেকটাই কমবে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে সেলটি চালু হবে বলে জানা গেছে।

এটুআই-একশপের এই প্রকল্পটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন রেজওয়ানুল হক। তিনি জানান, প্ল্যাটফর্মটি চালু হলে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কাজ অনেক সহজ হবে। এর ফলে অভিযোগ নিষ্পত্তির গতি ৬০-৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গত ৪ জুলাই জারি হওয়া ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকায় ডিজিটাল কমার্স ব্যবসায়-সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম চালু হলে অনলাইন ব্যবসার ওপর আমাদের নজরদারি করা সহজ হবে। অনেক ক্রেতাই ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর পর্যন্ত যেতে পারেন না। কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম থাকলে অভিযোগ ভোক্তা অধিকার পর্যন্ত না পৌঁছালেও আমরা জানতে পারব কোন প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের বেশি ভোগান্তিতে ফেলছে।’

সূত্র জানায়, একশপের তৈরি করা প্ল্যাটফর্মটির নকশা অনুযায়ী প্রতিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে অভিযোগ প্ল্যাটফর্মটির হাইপার লিংক থাকবে। সেখানে ক্লিক করলে সরাসরি কেন্দ্রীয় অভিযোগ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করা যাবে। ক্রেতা তার পরিচয় এবং পণ্যের চালান নম্বর উল্লেখ করে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগের সঙ্গে পণ্যের ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য প্রমাণ যুক্ত করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। নকশাটা এমনভাবে করা হয়েছে, যেন ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সমস্যা নিষ্পত্তি-সংক্রান্ত আলোচনার প্রমাণ থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি নিষ্পত্তি না হয়, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে এবং তারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুন মাসে গ্রাহকরা ১৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ২২ হাজার অভিযোগ করেছেন। তিন মাস আগে এ সংখ্যা ছিল ১৩ হাজারের মতো। জুন পর্যন্ত অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছে ইভ্যালি, দারাজ, সহজ, আজকের ডিল, ফুডপান্ডা, চালডাল, প্রিয়শপ, ফালগুনী, অথবা, উবার, পাঠাও, বিক্রয়, নিরাপদ, ই-অরেঞ্জ, রকমারি, ধামাকা শপিং, আদিয়ান মার্ট ও আলেশা মার্ট।

সেপ্টেম্বরে তালিকায় যোগ হয় আরও ২৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম- মনোহর, দালাল প্লাস, কিউকম, পিকাবু, পাফজি, আলাদিনের প্রদীপ, মীনা ক্লিক, বাবুই, ব্যাকপ্যাক, আলি টু বিডি, সেলমার্ট, গ্যাজেট মার্ট, বিডিটিকেটস, সাবু শপ, আমারি, শপআপ, সিরাজগঞ্জ শপ, কমপ্লেক্স ডটকম, রাজারহাট, বিডিশপ, চাহিদা ইশপ, আনন্দের বাজার ও বুমবুম।

১৭ আগস্ট ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে রাজধানীর গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, মাসুকুর রহমান, আমানুল্লাহ, বীথি আক্তার, কাওসারসহ অন্যরা গা ঢাকা দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া একই থানায় প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের আরেক মামলায় ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। মামলা হয় আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, গ্রেপ্তারও হন অনেকে।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ অভিযোগ এসেছে ইভ্যালি ডটকম লিমিটেডের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর তিন বছরও পেরোয়নি, জমা হয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। গত তিন মাসেই অভিযোগ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তবে গত তিন মাসে অভিযোগের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার সূত্রে জানা গেছে, মাঝে এক সপ্তাহেই অভিযোগ এসেছে ২ হাজার ৬০০টির মতো। ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করা ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গত তিন মাসে অভিযোগ বেড়েছে প্রায় ৯৯ গুণ।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here