আগামী তিন মাস চলার মতো পেঁয়াজ মজুদ আছে দেশে, শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠিও দেয়া হয়েছে, তারপরও বাণিজ্য সচিব বলছেন আরও এক মাস পেঁয়াজের দাম কমবে না।
সোমবার (১১ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি ও মূল্য পরিস্থিতির স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখতে’ এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সম্প্রতি রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম। সোমবার বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, আগামী এক মাস দাম যেন না বাড়ে সে জন্য বাজার মনিটরিং টিম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
শুধু পেঁয়াজই নয়, সম্প্রতি অনেক নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কয়েকটি পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।
তিনি বলেন, ‘আগামী চার মাস পেঁয়াজের ওপর ট্যাক্স প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এনবিআর বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেবে। গত বছর চার মাসের জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। আমরা আশা করছি, এ বছর তিন মাসের জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে।’
এছাড়া পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ আছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ আছে। এছাড়া নভেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষে বাজারে নতুন পেঁয়াজও চলে আসবে।’
শুধু বাণিজ্য সচিবই নয়, বাণিজ্যমন্ত্রীও জানান পেঁয়াজের মজুদ পর্যাপ্ত আছে। সভা শেষে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। এই পেঁয়াজ দিয়ে আগামী আড়াই থেকে তিন মাস চলতে পারে।’
শুল্ক কমানো হয়েছে, মজুদও আছে, তারপরও এক মাস কেন দাম বাড়তি থাকবে- সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে ভারতের পরিস্থিতি ও ব্যবসায়ীদের দাম বাড়িয়ে দেয়ার প্রবণতাকে দায়ী করেন বাণিজ্য সচিব।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘মূলত ভারত থেকে বেশি আমদানি করা হয়। কিছু মায়ানমার থেকে আসে। ভারতের বেঙ্গালুরুতে অতি বৃষ্টির কারণে সেখানকার বাজারে দাম বেড়ে গেছে। সেটার প্রভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি।’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, সোমবার দেশি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকায়। অথচ এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা ও আমদানি পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নিত্যপণ্যটির দামের এই অবস্থার মধ্যে বাণিজ্য সচিব বলছেন, দেশে পেঁয়াজের চাহিদার ৮০ শতাংশ দেশি পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ করতে হবে। তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অথচ দেশে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ থাকলেও দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
সভায় বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, আমাদের দেশে পেঁয়াজের চাহিদার ৮০ শতাংশই আমাদের দেশি পেঁয়াজের মাধ্যমেই হতে হবে। কিন্তু রাতারাতি তো উৎপাদন বাড়ানো যায় না। উন্নত জাত প্রচলন, বীজ সরবরাহ, কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ নানাভাবে ইনসেনটিভ দিতে হবে। তারপর আমরা পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন হতে পারব। কৃষি মন্ত্রণালয় ৩-৪ বছর সময় চেয়েছিল। এর মধ্যে দেড় বছরের মতো সময় গেছে।’
শুল্ক কমানোর বিষয়ে বাণিজ্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আগামী চার মাসের জন্য পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে। আশা করি, আগামী দুই-একদিনের মধ্যে আমরা ফলাফল পাব।’
আগামী এক মাস ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করবে, আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, যেন তারা আগামী এক মাসে চলমান দরেই পেঁয়াজ বিক্রি করে। মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম এই পণ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হচ্ছে ৩৩ লাখ টন। সংরক্ষণের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। বাকি থাকে ২৩ লাখ টন। আর প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ সব সময় উদ্বৃত্ত থাকে।
বর্তমানে কৃষকের কাছে প্রায় ৫ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে যা দিয়ে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চলা যাবে। অর্থাৎ দেশি পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ভারতে বৃষ্টি ও পূজার ছুটির অজুহাতে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়াকে দায়ী করে দাম বাড়িয়েছেন।