একীভূত নয়, পদ্মা ব্যাংককে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

0
90

রাষ্ট্রায়ত্ত কোন ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের একীভূত হওয়ার চেষ্টাকে নিরুৎসাহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিবর্তে ব্যাংকটিকে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ এনে মূলধন ঘাটতি পূরণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী বা বিডিবিএলের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়ে পদ্মা ব্যাংক গত ৮ জুলাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে আবেদন করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২৫ আগস্ট এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায়।

সেই চিঠির জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ছাড়া অন্যান্য আর্থিক সূচকেও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেয়ে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনার উদ্যোগ বাস্তবায়নই পদ্মা ব্যাংকের জন্য ভালো হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংককে দুটি প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রথম প্রস্তাব ছিল, বিদেশি বিনিয়োগ আনার বিষয়ে। আর দ্বিতীয়টি ছিল, একীভূত হওয়ার বিষয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রথম প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। প্রথমটি অনুমোদন করলে তো দ্বিতীয়টির প্রসঙ্গ আসছে না।’

পদ্মা ব্যাংক গত ১৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডেল মরগান অ্যান্ড কোম্পানির সহায়তায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহের আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে গত ২ আগস্ট নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে পদ্মা ব্যাংককে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে একীভূতকরণের সুযোগ বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে আছে। দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংককে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য কোন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ বা অবসায়নের ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে নিশ্চিত হতে হয় যে, একীভূত হলে তা তাদের পাওনাদার, শেয়ারহোল্ডার বা আমানতকারীরা সমানভাবে লাভবান হবে। তাছাড়া সরকারি ব্যাংকগুলো নিজেরাই অধিক মাত্রায় খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও অন্যান্য আর্থিক সূচকসহ, ব্যাংক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে রয়েছে।

পদ্মা ব্যাংকের দুই প্রস্তাব নাকচ করে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ওই প্রস্তাব দেয়ার আগেই পদ্মা ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানির কাছে মূলধন চেয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২ আগস্ট এ ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে এ পর্যায়ে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে পদ্মা ব্যাংক কর্তৃক বৈদেশিক মূলধন আনা সম্ভব হলে তা করাই শ্রেয় হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে।

পদ্মা ব্যাংকের আগে নাম ছিল ফারমার্স ব্যাংক। অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে ব্যাংকটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে ২০১৭ সালে। সে সময় চাপের মুখে চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পরের বছর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, যিনি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পিএলসি এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান।

সে সময় পদ্মা ব্যাংককে উদ্ধার করতে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংক, যা ব্যাংকটির মোট মূলধনের ৬৬ শতাংশ। কিন্তু টাকার অভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হিমশিম খাওয়া পদ্মা ব্যাংক গত জুলাই মাসে সরকারের কাছে নতুন আবেদন করে। সেখানে সরকারি ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করার অনুমতি চায় পদ্মা ব্যাংক। আর তা না হলে সরকারি কোন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় ওই আবেদনে।

পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এহসান খসরুর পাঠানো ওই প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল।

এর মধ্যেই গত ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘ব্যাংক যেগুলো মার্জার করা দরকার, সেগুলো মার্জার হবে। সেটার আইন (ব্যাংক কোম্পানি) ড্রাফট হয়ে গেছে। আমরা এগুলোকে সংসদে নিয়ে আসব। সেখান থেকে অনুমোদিত হয়ে যাওয়ার পর মার্জার কার্যক্রম শুরু হবে।’

২০২০ সালের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মা ব্যাংকের সুদযোগ্য সম্পদ ৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। আর আয়যোগ্য সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ওই বছর ব্যাংকের পরিচালন লোকসান হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। এ বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকের পরিচালন লোকসান দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটি টাকা।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here