বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রপ্তানি আয়। গত মাসে এই সূচকটি খুব ভালো গেছে। একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা আসেনি।
সেপ্টেম্বরে ৪১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ যা টাকার অঙ্কে ৩৫ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। একক মাসের হিসাবে এটি রেকর্ড। কারণ এর আগে কখনো এক মাসে এতো পরিমান আয় হয়নি।
গতকাল প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার বা ৩৮ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩০১ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট ১ হাজার ১০২ কোটি ২০ লাখ (১১.০২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময় পণ্য রপ্তানি থেকে ৯৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, এই তিন মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ দশমিক ২০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এই তিন মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অথচ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১ দশমিক ০২ শতাংশ নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় মাস আগস্টে সেই প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় এসে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশে ওঠে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানিতে এক লাফে সেই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৪১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে রপ্তানি বেড়েছে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার যা শতাংশের হিসাবে ৪১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। দেশি টাকার অঙ্কে যার মূল্য বেড়েছে ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (ডলার প্রতি ৮৪ টাকা হিসাবে
ইপিবির পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশের বাজারে দেশীয় পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৪১৮ কোটি ৮৪ লাখ ইউএস ডলার যা এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ২ হাজার ৪১৩ কোটি ৪২ লাখ ইউএস ডলার। সেই হিসাবে ১০০ কোটি ইউএস ডলার পরিমাণ রপ্তানি আয় বেড়েছে পোশাক খাতে।
শুধু গত বছরের এক সময়ে চেয়ে বেশি নয়, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসের মধ্যে পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে। এর আগের গত জুন মাসে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৯৪ কোটি ৮৮ লাখ ইউএস ডলার পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তারপরের মাস জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছিল ২ হাজার ৮৮৭ কোটি ২২ লাখ ডলার এবং আগস্টে রপ্তানি আয় হয়েছিল ২ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫৬ লাখ ইউএস ডলার পরিমাণ।
সেপ্টেম্বর মাসে ওভেন ও নিটওয়্যার খাতের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৪১৮ কোটি ৮৪ লাখ ইউএস ডলার। এর মধ্যে ওভেন খাতের পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৫১৩ কোটি ৫৫ লাখ ইউএস ডলার। আর নিটওয়্যার খাতের রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৯০৫ কোটি ২৫ লাখ ইউএস ডলার। গত বছর (২০২০ সাল) সেপ্টেম্বর মাসে ওভেন খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছিল ১ হাজার ৬৪ কোটি ৫৪ লাখ ইউএস ডলার। আর নিটওয়্যার খাত থেকে আয় হয়েছিল এ হাজার ৩৪৮ কোটি ৮৮ লাখ ইউএস ডলার।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘গত দেড় বছর করোনার অতিমারীর কারণে আমরা অনেকটাই অবরুদ্ধ ছিলাম। করোনার ধাক্কা আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমাদের কারখানাগুলোতে প্রচুর পরিমাণ অর্ডার আসছে। পোশাকের দামও বাড়ছে। করোনার মধ্যে কারখানা খোলা রেখে আমরা কেবল ব্যবসা ধরে রেখেছি। এখন তার ফল পাচ্ছি।’
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম আরও বাড়বে জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘পশ্চিমা ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে। পোশাকের আরও বেশি দাম পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা পাওয়ার পথও সুগম হয়েছে। ফলে আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে।’