চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। টাকার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা) যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৬৭২ কোটি ৭০ টাকা, যা এর আগের মাস আগস্টের চেয়ে ৭১৩ কোটি টাকা কম। আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল এক দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা ১৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭২৬ দশমিক ২৯ মিলিয়ন (১.৭২ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার বা ১৪ হাজার ৬৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা তার আগের বছরের একই সময়ের (২০২০ সালের সেপ্টেম্বর) তুলনায় তিন হাজার ৬১০ কোটি ৮০ লাখ কোটি টাকা কম। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.১৫ মিলিয়ন ডলার বা ১৮ হাজার ২৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
চলতি বছরের আগস্টের চেয়ে ৭১৩ কোটি টাকা কম এসেছে বিদায়ী সেপ্টেম্বরে। আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৮১ বিলিয়ন ডলার বা ১৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। তার আগের মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১৫ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। জুলাইয়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে এক হাজার ২৩৫ কোটি টাকা কম এসেছে।
অর্থবছর হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোন একজন প্রবাসী বাংলাদেশে ১০০ টাকা পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন তিনি। এছাড়া ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরও ১ শতাংশ দেয়ার অফার দেয়া হয়। এসব কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
এ সময় সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এরপর ডাচবাংলা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক। এসব অর্থ বেশিরভাগই এসেছে ১০টি দেশ থেকে। দেশগুলো হলো, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ওমান, কাতার, ইতালি, বাহরাইন ও সিঙ্গাপুর।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ধারাবাহিক রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত অর্থবছরে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। সে সময় সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে। তখন অনেক কোম্পানি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের সব দেনা-পাওনা দিয়ে ছাঁটাই করেছিল। সে কারণে অনেক প্রবাসী একবারে হয়তো অনেক বেশি টাকা নিয়ে এসেছিল। এতে প্রবাসী আয় বেড়ে যায়। এখন আবার তারা নতুন করে কাজে যোগ দিয়েছেন, কাজ করে নির্দিষ্ট বেতনের অংশ পাঠাচ্ছেন বলে কম মনে হচ্ছে। যেহেতু সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।’