দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি না করে স্পট মার্কেটে জ্বালানি কেনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও জ্বালানির মূল্য গড় হিসাবে চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শনিবার (২ অক্টোবর) ‘গ্যাস সর্টেজ, এলএনজি প্রাইস ভোলাটিলিটি: বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্লোবাল পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী জ্বালানির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায় এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হন জাতিসংঘের ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম প্রেসিডেন্সির স্পেশাল এনভয় আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অ্যানার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আবদুস সালেক। প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন সামিট গ্রুপের উপদেষ্টা ও পেট্রবাংলার সাবেক পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান এবং বিজিএমই এর পরিচালক ও মোহাম্মাদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাভিদুল হক।
অ্যানার্জি অ্যান্ড পাওয়ার (ইপি) আয়োজিত এ সংলাপ সঞ্চালনা করেন ইপির এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
বক্তারা বলেন, বাড়তি দামের কারণে সরকার স্পট মার্কেট থেকে হুট করে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় এলএনজি সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। প্রতিদিনের সরবরাহ সাড়ে ৪০০ কিউবিক ফিট থেকে ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিটে নেমে আসে। কিন্তু শিল্পকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহের কারণে আবারও স্পট থেকে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।
তারা বলেন, এ এলএনজি গত মাসের দেশে যুক্ত হওয়ার কারণে সেপ্টেম্বরের শেষ ১০ দিনে এলএনজি ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট থেকে ৯০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিটে দাঁড়িয়েছে। এলএনজি কেনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে হবে। স্পট বাজারের ওপর বেশি নির্ভরতা সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, এক সময় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৯০ ভাগ গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি মিশ্রণ মোটামুটি যথাযথ করা সম্ভব হয়েছে। তবে অ্যানার্জি এফিশিয়েন্সি নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। আমাদের বাতাসের যে গতি আছে, তাতে উপকূলে ৩০ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সাগরের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কোথাও কোথাও হচ্ছে। বিষয়টি দেখা যেতে পারে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। ভারত, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আরও অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। কেননা ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে জল এবং সোলার বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারলে তা কার্বনমুক্ত বিদ্যুতের পরিমাণ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।’
অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘হুটহাট করে পরিকল্পনা বদল করা ঠিক নয়। আমরা হঠাৎ করেই ১০টি কয়লা প্রকল্প বন্ধ করে এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলাম। নিজস্ব কয়লা তোলা বন্ধ রাখলাম পরিবেশের কথা বলে। কয়লা ও পরামাণু দিয়ে বেইজ লোড বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে, এলএনজি নয়। এটা হতে পারে পিকিং পাওয়ার জ্বালানি।’