অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে প্রায় ১৩ শতাংশ পরিবার

0
117

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি জরিপ প্রকাশ করেছে। ২০১৬ সালে পরিচালিত সেই জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রায় ১৩ শতাংশ পরিবার অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র পরিবার বসবাস করে কুড়িগ্রামে এবং সবচেয়ে কম অর্থাৎ একটিও অতি দরিদ্র পরিবার নেই নারায়ণগঞ্জে। সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে অতি দরিদ্র পরিবার কমিয়ে আনা হবে প্রায় ৩ শতাংশে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ নারীপ্রধান পরিবার অতি দরিদ্র, যেখানে ১৩ শতাংশ পুরুষপ্রধান পরিবার অতি দরিদ্র। গড়ে দেশের ১২ দশমিক ৯০ পরিবারের বাস অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের উদ্যোগে গৃহীত বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএস সংস্থার জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে গবেষণাটি পরিচালনা করে।

জরিপে আরও বলা হয়, কুড়িগ্রাম জেলায় অতি দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় ৫৩ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার অতি দরিদ্র। অতি দরিদ্রের শীর্ষ জেলা হিসেবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে বান্দরবান ও দিনাজপুর। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় অতি দরিদ্র পরিবার একজনও নেই। অতি দারিদ্র্যের হার কম দ্বিতীয় ও তৃতীয় জেলা হচ্ছে, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জ। যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৯ এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ অতি দরিদ্র মানুষের বাস এই দুই জেলায়।

প্রতিবেদনে ধর্মীয় পরিচয়ে অতি দরিদ্র্যের একটি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, মুসলিমদের মধ্যে অতি দরিদ্র সবচেয়ে কম ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। হিন্দু এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা আছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে, যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৯০ এবং ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ বৌদ্ধ অতি দরিদ্র।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ দশমিক ১ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় না। উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত না যাওয়া শিশুর হার ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ। শিশু শ্রমে যুক্ত আছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু। ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের কম বয়সেই।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নন, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।

বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসি চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এতে আলোচনা করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে সামাজিক সম্পদ রয়েছে যেমন- রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, খাল-বিল, নদী, পাহাড়সহ এ ধরনের সম্পদ ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রেও পিছিয়েপড়া মানুষগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়ার মাধ্যমেই ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি আমরা।’

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্য বিমোচনকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্য হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য একটা অংশ দরিদ্র হচ্ছে নদী ভাঙনের কারণে। এটার অন্যতম প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি গ্রামে শহরের সুবিধা প্রদান করে অবাধ যাতায়াতের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।’

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দেশে একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন সামাজিক সূচক কমছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে নদী ভাঙ্ন এবং অন্যান্য প্রকৃতিক দুর্যোগে দরিদ্র্য বাড়ছে। জলবায়ু সহনক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে দারিদ্র্য হ্রাস। দারিদ্র্র্য হ্রাসে নীতি সমর্থন দরকার। শিক্ষাবৃত্তি ২০০৪ সালে যা ছিল, এখনও তাই আছে।’

বিনায়ক সেন বলেন, ‘দারিদ্র্য হ্রাসে সরকারের প্রচেষ্টা ৫ বছর পিছিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালের পর্যায়ে আবার নেমে গেছে। ওই বছর দারিদ্র্যের হার ছিল ২৫ শতাংশ। গত বছর জুন পর্যন্ত কোভিড ১৯-এর প্রথম ঢেউয়ের প্রভাবে বিভিন্ন গবেষণায় দারিদ্র্যহার ৩০-৩৫ শতাংশে উন্নীত হয় বলে জানানো হয়। জুন মাসের পর অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৮০ শতাংশ পুনরুদ্ধার হয়। আর দারিদ্র্য হার ২০১৬ সালের পর্যায়ে উঠে এসেছে।’

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here