পদ্মা ব্যাংকের একীভূত হওয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে, জানালেন অর্থমন্ত্রী

0
131

রাষ্ট্রায়ত্ত যেকোন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় পদ্মা ব্যাংক। তাদের এমন প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনীতি সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রী এ কথা জানান।

বেসিক ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক মার্জড হওয়ার আগ্রহের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকগুলো মার্জ হবে, সেগুলো মোটামুটি ড্রাফট স্টেজে আছে। আমাদের ড্রাফট হয়ে গেছে, সেটিকে আমরা সংসদে নিয়ে আসবো এবং সেখানে অনুমোদন হওয়ার পর মার্জের কার্যক্রম শুরু হবে।’

পদ্মা ব্যাংক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো আবেদন পাইনি। পদ্মা ব্যাংক সম্পর্কে একটি বিষয় আপনাদের অবশ্যই জানা আছে, সেটি হলো ব্যাংকটির বর্তমান ওনারশিপ স্ট্রাকচারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সবগুলোই জড়িত। তার মধ্যে সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, জনতা সবগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোরই শেয়ার আছে। সেভাবেই ব্যাংকটি পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে যে বোর্ড রয়েছে, জনতা, সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ব্যাংকও আছে। অফকোর্স আমরা এ প্রস্তাব বিবেচনা করতে পারি। আইনটি আগে হতে হবে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এটি হবে।’

পদ্মা ব্যাংকের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তারা ব্যাংকটি ভালোভাবে চালাতে পারেনি। সেখানে অনেক দুর্নীতি হয়েছে আপনারা জানেন, আমরাও শুনেছি। কীভাবে দুর্নীতিতে জড়িত হয়েছে, সেটা এখনো আমরা জানতে পারিনি। কারণ যারা অন্যায় করেছে, দুর্নীতি করেছে, তার প্রাইমারিলি স্টেটমেন্ট ছিল। সেটির ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া চলছে এবং তারা এখন জেলে আছে।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা অন্যায়-অপরাধ করবে, তাদের বিরুদ্ধে যে আইনি প্রক্রিয়া আমরা তাদের সেই আইনের আওতায় এনেছি এবং তারা জেলে আছে। ব্যাংকটিতে যারা শেয়ার হোল্ডার আছে, যারা ঋণগ্রহীতা বা ডিপোজিট রেখেছে, সেটিও আমাদের দেখতে হবে। তাই ব্যাংকটি যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, চলমান রাখার জন্যই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছে।’

পদ্মা ব্যাংকের ফান্ড রাইজের দায়িত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পত্র-পত্রিকায় যা এসেছে, সেটা আমরা দেখেছি। সবাই তো চেষ্টা করতে পারে বিদেশ থেকে টাকা আনার জন্য। কিন্তু বিদেশিরা যদি পদ্মা ব্যাংকের ব্যালেন্সশিট দেখে মনে করে, বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত, তারা বিনিয়োগ করবে। পদ্মা ব্যাংকে এমন কোন রেস্ট্রিকশন নেই, যে পারবে না। তবে তাদের কমপ্লায়েন্স থাকতে হবে।’

সোলার পাওয়ারের কন্ট্রাক্ট পানামাকে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পানামা নামের একটি দেশ আছে, এটি সেই পানামা। যে প্রতিষ্ঠান নিয়ে কন্ট্রোভার্সি, সেই পানামা এ পানামা নয়। আমার মনে হয়, পানামা নামের কোম্পানিটি বিতর্কিত, সেটি আমরা জানি। তাই আমরা সাবধানতা অবলম্বন করি।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পানামা পেপারস, যেখানে অনেকের টাকা ছিল, যা আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, আমরাও দেখেছি। সেখানে ডিটেইলে গিয়ে এমন কিছু আমরা পাইনি। পানামা পেপারস আর পানামা এক না। হতে পারে এটা ভিন্ন কোম্পানি। পাওয়ার প্ল্যান্টটিতে সরকারের কোন বিনিয়োগ নেই। এখানে তাদের সঙ্গে যে চুক্তি তা হলো, তারা পাওয়ার প্রডিউস করবে, তারপর সরকার তা কিনে নেবে। পুরো বিনিয়োগটা জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। সরকার এখানে ফাইন্যান্স করছে না।’

এর আগে গত মাসের শুরুর দিকে জানা যায় যায়, ব্যাংকটি সরকারি কোন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার যে প্রস্তাব দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল।

উল্লেখ্য, অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসা ফারমার্স ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে ২০১৭ সালে। সে সময় চাপের মুখে চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পরের বছর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, যিনি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজেমেন্ট পিএলসি এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান। সে সময় পদ্মা ব্যাংককে উদ্ধার করতে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংক, যা ব্যাংকটির মোট মূলধনের ৬৬ শতাংশ।

যাত্রা শুরুর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক দেউলিয়া হতে বসেছিল ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে। গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়, পুনর্গঠন করা হয় পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকের নাম বদলে হয় পদ্মা ব্যাংক।

সরকারের উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মিলে পদ্মা ব্যাংকের মালিকানার বেশিরভাগ অংশ কিনে নেয়। সেজন্য ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন যোগাতে হয়। কিন্তু তাতেও যে পদ্মা ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, অর্থ মন্ত্রণালয়ে লেখা পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এহসান খসরুর চিঠিতেই তা স্পষ্ট।

চিঠিতে বলা হয়, পদ্মা ব্যাংককে ‘অনতিবিলম্বে’ সোনালী, জনতা, অগ্রণী বা রূপালী ব্যাংকের মতো অংশীদার কোন ব্যাংক বা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) মতো কোন সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত বা অধিগ্রহণ করা যেতে পারে।

আপনার মতামত প্রদান করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here