ই-কমার্স সাইট থেকে কোরবানির গরু কিনতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি অনলাইনে গরুর অর্ডার দিয়ে সঠিক গরু পাননি। রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের এক অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান।
কমিশনের সম্মেলন কক্ষে ‘প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে ‘ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
টিপু মুনশি বলেন, ‘গত কোরবানি ঈদে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান উদ্বোধনকালে একটি গরুর জন্য এক লাখ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে যে গরুটি দেখিয়েছিল, সেটি আমি পাইনি। আমি নিজেই অর্ডার করে প্রতারিত হয়েছিলাম। কোন কিছু নতুন করে চালু করলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তার ভুক্তভোগী আমি নিজেই। আমার মতো অনেকেই না বুঝে ই-কমার্সে বিনিয়োগ করেছেন। ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। সঠিক আইনের মাধ্যমে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।’
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ই-কমার্স বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচার মাধ্যম তথা সাংবাদিকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল বাণিজ্য বিশ^ব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। গুটিকয়েক অসৎ প্রতিষ্ঠানের কারণে ই-কমার্স বন্ধ করে দেয়ার সুযোগ নেই। করোনাকালীন ই-কমার্স ভোক্তাদের সেবায় কাজ করে সুনাম অর্জন করেছে। সরকার যথাযথ আইন প্রণয়ন করে সুশৃঙ্খলভাবে ই-বাণিজ্য পরিচালনা করার জন্য কাজ করছে। ই-কমার্স সম্পর্কে মানুষের ধারণা পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন। এ জন্য মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাংবাদিকগণ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে। ই-কমার্স বিষয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ইতোপূর্বে যে সব প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্রতারিত করেছে, সেগুলোর অনেক সম্পদ আছে। সম্পদগুলো বিক্রি করলে অনেকের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব। এগুলো বিষয় মাথায় রেখে সরকার কাজ করছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি নতুন প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এটি নির্দিষ্ট আইনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এ কমিশনের জনবল এবং সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা আছে। এ কমিশনকে শক্তিশালী করতে সরকার কাজ করছে। এ কমিশন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্বপ্রণোদিতভাবে অনেক বিষয়ে তদন্ত করে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই বাণিজ্য ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতা কমিশন কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন শক্তিশালী হবে।’
এছাড়াও তিনি আরও বলেন, ‘ইভ্যালি, যুবক ও ডেসটিনির যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তা বিক্রি করলে গ্রাহকদের অন্তত ৫০-৬০ শতাংশ পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। যদি এ সুযোগটি পাওয়া যেত, তাহলে হয়তো ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হতো।’
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- কমিশনের সদস্য মনজুর কাদের, নাসরিন বেগম ও জিএম সালেহ উদ্দিন ও ইআরএফের সভাপতি শারভিন রিনভী।