গত সপ্তাহে সামান্য উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে। সপ্তাহটিতে উভয় শেয়ারবাজারের প্রধান প্রধান সূচক সামান্য বেড়েছে। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। তবে সপ্তাহটিতে বিনিয়োগকারীরা আড়াই হাজার কোটি টাকা ফিরে পেয়েছে।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬ কোটি ৫৮ লাখ ২৮ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীরা দুই হাজার ৫৬১ কোটি ২৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে।
গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৯ হাজার ৭০৯ কোটি ৪৯ লাখ ২৮ হাজার ৮১১ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১১ হাজার ১২২ কোটি ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার ৮০৬ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন এক হাজার ৪১২ কোটি ৯০ লাখ ১৬ হাজার ৯৯৫ টাকা বা ১৩ শতাংশ কমেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২২.২৯ পয়েন্ট বা ০.৩১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ২৫০.৬০ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩.৯৫ পয়েন্ট বা ০.২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৮১.০৫ পয়েন্টে। তবে ডিএসই-৩০ সূচক ০.৯৯ পয়েন্ট ০.০৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৭৩.৫৬ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৭৮টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬২টির বা ৪২.৮৬ শতাংশের, কমেছে ১৯৮টির বা ৫২.৩৮ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির বা ৪.৭৬ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩২৫ কোটি ৮০ লাখ ৪০৭ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪০৬ কোটি ৫০ লাখ ৬১ হাজার ২৪৩ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ৮০ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার ৮৩৬ টাকা বা ২০ শতাংশ কমেছে।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪.৭১ পয়েন্ট বা ০.০২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ১৪৬.০৬ পয়েন্টে। সিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ৪.৬৩ পয়েন্ট বা ০.০৩ শতাংশ ও সিএসআই ৭.৩৩ পয়েন্ট বা ০.৫৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২ হাজার ৬৮৭.২১ পয়েন্টে ও এক হাজার ৩৪৯.৫০ পয়েন্টে। তবে সিএসই-৩০ সূচক ১২৯.৫০ পয়েন্ট বা ০.৮৩ শতাংশ ও সিএসই-৫০ সূচক ৫.৯৬ পয়েন্ট বা ০.৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৩১.৯১ পয়েন্টে ও এক হাজার ৫৪৫.৯১ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪৯টির বা ৪৩.৫৭ শতাংশের দর বেড়েছে, ১৭৯টির বা ৫২.৩৪ শতাংশের কমেছে এবং ১৪টির বা ৪.০৯ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
গত সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই ছিল ২০.৬০ পয়েন্টে যা সপ্তাহ শেষে ২০.৭১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও ০.১১ পয়েন্ট বা ০.৫৩ শতাংশ বেড়েছে।
সপ্তাহ শেষে ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ৭.৮১ পয়েন্টে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৩০.৫৩ পয়েন্টে, বস্ত্র খাতের ৪৮.৭৩ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২১.৬৪ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ১৬.৫১ পয়েন্টে, বীমা খাতের ২২.৫১ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ৩৫.৬৩ পয়েন্টে, খাদ্য খাতের ৩৭.১৪ পয়েন্টে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১৩.১৫ শতাংশ, চামড়া খাতের ১৪৮.৫৯ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ২৮.৬৫ পয়েন্টে, আর্থিক খাতের ১১৩.১৬ পয়েন্টে, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ৩৬৫.৩৮ পয়েন্টে, পেপার খাতের ৪৯.৫১ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতের ১৪.৭৪ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতের ৩২.০১ পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ৩৫.৮৫ পয়েন্টে এবং পাট খাতের পিই (-) ৪২.৫৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
গত সপ্তাহে ডিএসই লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৬২টির বা ৪২.৮৬ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে প্যাসিফিক ডেনিমসের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে প্যাসিফিক ডেনিমসের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ১৪.৬০ টাকায়। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে এর শেয়ারের ক্লোজিং দর দাঁড়ায় ১৮.২০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩.৬০ টাকা বা ২৪.৬৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মাধ্যমে প্যাসিফিক ডেনিমস ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন গেইনার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।
ডিএসইতে সাপ্তাহিক টপটেন গেইনার তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ২০.৮০ শতাংশ, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ১৯.৪৪ শতাংশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ১৭.৮৭ শতাংশ, কেডিএস এক্সেসরিজের ১৭.২৫ শতাংশ, ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের ১৬.৪৩ শতাংশ, ইভিন্স টেক্সটাইলের ১৬.৩৮ শতাংশ, কাট্টালি টেক্সটাইলের ১৬.০৩ শতাংশ, আমরা টেকনোলজিসের ১৩.৭৬ শতাংশ এবং রূপালী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ১৩.১৪ শতাংশ বেড়েছে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৯৮টির বা ৫২.৩৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। সপ্তাহটিতে বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে মনোস্পুল পেপারের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ২২৯.৫০ টাকায়। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে এর শেয়ারের ক্লোজিং দর দাঁড়ায় ১৮৭.৩০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪২.২০ টাকা বা ১৮.৩৯ শতাংশ কমেছে।
এর মাধ্যমে মনোস্পুল পেপার ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন লুজার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।
ডিএসইতে সাপ্তাহিক টপটেন লুজার তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে পেপার প্রসেসিংয়ের ১৮.১৫ শতাংশ, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫.৪৬ শতাংশ, ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৩.১৩ শতাংশ, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১১.৪৩ শতাংশ, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১১.১১ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১০.৮১ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ, ডমিনেজ স্টিলের ৯.৩৮ শতাংশ এবং ইবনে সিনার শেয়ার দর ৮.৮১ শতাংশ কমেছে।